সুরা আল ফাতিহা
ভূমিকা
﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১) প্রশংসা ১ একমাত্র আল্লাহর জন্য ২ যিনি নিখল বিশ্ব –জাহানের রব, ৩
﴿الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
২) যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময় ৪
﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৩) প্রতিদান দিবসের মালিক ৷ ৫
﴿إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ﴾
৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং ৬ একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই ৭
﴿اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ﴾
৫) তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও, ৮
﴿صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ﴾
৬) তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ, ৯
﴿غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ﴾
৭) যাদের ওপর গযব পড়েনি এবং ১০ যারা পথভ্রষ্ট হয়নি ৷
আত তওবা
ভূমিকা
﴿بَرَاءَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ﴾
১) সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষনা করা হলো ১ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে , যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছিলে তাদের সাথে৷ ২
﴿فَسِيحُوا
فِي الْأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ
مُعْجِزِي اللَّهِ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ مُخْزِي الْكَافِرِينَ﴾
২) কাজেই তোমরা দেশের মধ্যে আরো চার মাসকাল চলাফেরা করে নাও ৩ এবং জেনে রেখো তোমরা আল্লাহকে অক্ষম ও শক্তিহীন করতে পারবে না৷ আর আল্লাহ সত্য অস্বীকারকারীদের অবশ্যই লাঞ্ছিত করবেন৷
﴿وَأَذَانٌ
مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ
أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن
تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا
أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا
بِعَذَابٍ أَلِيمٍ﴾
৩) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে বড় হজ্জের ৪
দিনে সমস্ত মানুষের প্রতি সাধারন ঘোষণা করা হচ্ছেঃ “আল্লাহর মুশরিকদের
থেকে দায়িত্বমুক্ত এবং তাঁর রসূলও৷ এখন যদি তোমরা তাওবা করে নাও তাহলে তো
তোমাদেরই জন্য ভাল৷ আর যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে খুব ভাল করেই বুঝে নাও,
তোমরা আল্লাহকে শক্তি সামর্থহীন করতে পারবে না৷ আর হে নবী !
অস্বীকারকারীদের কঠিন আযাবের সুখবর দিয়ে দাও৷
﴿إِلَّا
الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنقُصُوكُمْ
شَيْئًا وَلَمْ يُظَاهِرُوا عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّوا إِلَيْهِمْ
عَهْدَهُمْ إِلَىٰ مُدَّتِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ﴾
৪)
তবে যেসব মুশরিকের সাথে তোমরা চুক্তি করেছো তারপর তারা তোমাদের সাথে
নিজেদের চুক্তি রক্ষায় কোন ক্রুটি করেনি আর তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে
সাহায্যও করেনি তাদের ছাড়া৷ এ ধরনের লোকদের সাথে তোমরাও নির্দিষ্ট মেয়াদ
পর্যন্ত চুক্তি পালন করবে৷ কারণ আল্লাহ তাকওয়া তথা সংযম অবলম্বকারীদেরকে
পছন্দ করেন৷ ৫
﴿فَإِذَا
انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ
وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ
مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ
فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
৫) অতএব, হারাম মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে গেলে ৬
মুশরিকদের যেখানে পাও হত্যা করো এবং তাদের ধরো, ঘেরাও করো এবং প্রত্যেক
ঘাঁটতি তাদের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকো৷ তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায
কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও৷ ৭ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
﴿وَإِنْ
أَحَدٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّىٰ يَسْمَعَ
كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ أَبْلِغْهُ مَأْمَنَهُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ
لَّا يَعْلَمُونَ﴾
৬) আর যদি মুশরিকদের কোন ব্যক্তি আশ্রয় প্রার্থনা
করে তোমার কাছে আসতে চায়( যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে) তাহলে তাকে
আল্লাহর কালাম শোনা পর্যন্ত আশ্রয় দাও, ৮ তারপর তাকে তার নিরাপদ জায়গায় পৌছিয়ে দাও৷ এরা অজ্ঞ বলেই এটা করা উচিত৷
﴿كَيْفَ
يَكُونُ لِلْمُشْرِكِينَ عَهْدٌ عِندَ اللَّهِ وَعِندَ رَسُولِهِ إِلَّا
الَّذِينَ عَاهَدتُّمْ عِندَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ فَمَا اسْتَقَامُوا
لَكُمْ فَاسْتَقِيمُوا لَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ﴾
৭)
মুশরিকদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে কোন নিরাপত্তার অংগীকার কেমন
করে হাতে পারে? তবে যাদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পাদন করছিলে মসজিদে
হারামের কাছে তাদের কথা স্বতন্ত্র ৷ ৯
কাজেই যতক্ষন তারা তোমাদের জন্য সোজা-সরল থাকে ততক্ষণ তোমরাও তাদের
জন্য সোজা-সরল থাকো৷ কারণ আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন৷
﴿كَيْفَ
وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً
ۚ يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَىٰ قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ
فَاسِقُونَ﴾
৮) তবে তাদের ছাড়া অন্য মুশরিকদের জন্য নিরাপত্তা চুক্তি
কেমন করে হতে পারে, যখন তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা তোমাদের ওপর
নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পরলে তোমাদের ব্যাপারে কোন আত্মীয়তার পরোয়া করবে না
এবং কোন অংগীকাররে দায়িত্বও নেবে না৷ তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট
করে কিন্তু তাদের মন তা অস্বীকার করে৷ ১০ আর তাদের অধিকাংশই ফাসেক৷ ১১
﴿اشْتَرَوْا بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَصَدُّوا عَن سَبِيلِهِ ۚ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
৯) তারা আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে সামান্যতম মূল গ্রহণ করে নিয়েছে৷ ১২ তারপর আল্লাহ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ১৩ তারা যা করতে অভ্যস্ত , তা অত্যন্ত খারাপ কাজ৷
﴿لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ﴾
১০)
কোন মুমিনের ব্যাপারে তারা না আত্মীয়তার মর্যাদা রক্ষা করে, আর না কোন
অঙ্গীকারের ধার ধারে ৷ আগ্রাসন ও বাড়াবাড়ি সবসময় তাদের পক্ষ থেকেই হয়ে
থাকে৷
﴿فَإِن
تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي
الدِّينِ ۗ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ﴾
১১) কাজেই
যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং নামায কয়েম করে এবং যাকাত দেয় তাহলে তারা
তোমাদের দীনী ভাই৷ যারা জানে, তাদের জন্য আমার বিধান ষ্পষ্ট করে বর্ণনা
করি ৷ ১৪
﴿وَإِن
نَّكَثُوا أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ
فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ
لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ﴾
১২) আর যদি অঙ্গীকার করার পর তারা নিজেদের
কসম ভংগ করে এবং তোমাদের দীনের ওর হামলা চালাতে থাকে তাহলে কুফরীর
পতাকাবাহীদের সাথে যুদ্ধ করো৷ কারণ তাদের কসম বিশ্বাসযোগ্য নয়৷ হয়তো
(এরপর তরবারীর ভয়েই )তারা নিরস্ত হবে৷ ১৫
﴿أَلَا
تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ
الرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ
فَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴾
১৩) তোমরা কি লড়াই করবে না ১৬
এমন লোকদের সাথে যারা নিজেদের অঙ্গীকার ভংগ করে এসেছে এবং যারা রসূলকে
দেশ থেকে বের করে দেবার দুরভিসন্ধি করেছিল আর বাড়াবাড়ি সুচনা তারাই করেছিল?
তোমরা কি তাদেরকে ভয় করো? যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো,তাহলে আল্লাহকে ভয়
করাই তোমাদের জন্য অধিক সমীচীন৷
﴿قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ﴾
১৪)
তাদের সাথে লড়াই করো,আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদের শাস্তি দেবেন, তাদেরকে
লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন, তাদের মোকাবিলায় তোমাদের সাহায্য করবেন এবং অনেক
মুমিনের অন্তর শীতল করে দেবেন৷
﴿وَيُذْهِبْ غَيْظَ قُلُوبِهِمْ ۗ وَيَتُوبُ اللَّهُ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
১৫) আর তাদের অন্তরের জ্বালা জুড়িয়ে দেবেন৷ এবং যাকে ইচ্ছা তাওবা করার তাওফীক ও দান করবেন৷ ১৭ আল্লাহ সবকিছু জানেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী ৷
﴿أَمْ
حَسِبْتُمْ أَن تُتْرَكُوا وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا
مِنكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوا مِن دُونِ اللَّهِ وَلَا رَسُولِهِ وَلَا
الْمُؤْمِنِينَ وَلِيجَةً ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
১৬)
তোমরা কি একথা মনে করে রেখেছো যে তোমাদের এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? অথচ
আল্লাহ এখনো দেখেননি তোমাদের মধ্য থেকে কারা (তার পথে )সর্বাত্মক
প্রচেষ্টা চালালো এবং আল্লাহ ,রসূল ও মুমিনদের ছাড়া কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু
রূপে গ্রহণ করলো না? ১৮ তোমরা যা কিছু করো, আল্লাহ তা জানেন৷
﴿مَا
كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَن يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّهِ شَاهِدِينَ
عَلَىٰ أَنفُسِهِم بِالْكُفْرِ ۚ أُولَٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي
النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ﴾
১৭) মুশরিক যখন নিজেরাই নিজেদের কুফরীর সাক্ষ দিচ্ছে তখন আল্লাহর মসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণকারী ও খাদেম হওয়া তাদের কাজ নয়৷ ১৯ তাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে ২০ এবং তাদেরকে চিরকাল জাহান্নামে থাকতে হবে৷
﴿إِنَّمَا
يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ ۖ
فَعَسَىٰ أُولَٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ﴾
১৮) তারাই
হতে পারে আল্লাহর মসজিদ আবাদকারী (রক্ষণাবেক্ষণকারী ও সেবক) যারা আল্লাহর ও
পরকালকে মানে , নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ কে ছাড়া আর কাউকে
ভয় করেনা৷ তাদেরই ব্যাপারে আশা করা যেতে পারে যে, তারা সঠিক সোজা পথে
চলবে৷
﴿أَجَعَلْتُمْ
سِقَايَةَ الْحَاجِّ وَعِمَارَةَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ كَمَنْ آمَنَ
بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَجَاهَدَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ لَا
يَسْتَوُونَ عِندَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الظَّالِمِينَ﴾
১৯) তোমরা কি হাজীদের পানি পান করানো এবং মসজিদে
হারামের রক্ষণাবেক্ষণ করাকে এমন ব্যক্তিদের কাজের সমান মনে করে নিয়েছ যারা
ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি এবং সংগ্রাম -সাধনা করেছে
আল্লাহর পথে ? ২১
﴿الَّذِينَ
آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ
وَأَنفُسِهِمْ أَعْظَمُ دَرَجَةً عِندَ اللَّهِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ
الْفَائِزُونَ﴾
২০) এ উভয় দল আল্লাহর কাছে সমান নয়৷ আল্লাহ জালেমদের
পথ দেখান না৷ আল্লাহর কাছে তো তারাই উচ্চ মর্যাদার অধিকারী , যারা ঈমান
এনেছে এবং তার পথে ঘর-বাড়ি ছেড়েছে ও ধন-প্রাণ সমর্পন করে জিহাদ করেছে৷
তারাই সফলকাম ৷
﴿يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُم بِرَحْمَةٍ مِّنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَّهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُّقِيمٌ﴾
২১) তাদের রব তাদেরকে নিজের রহমত, সন্তোষ ও এমন জান্নাতের সুখবর দেন, যেখানে তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী সুখের সামগ্রী৷
﴿خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ﴾
২২) সেখানে তারা চিরকাল থাকবে ৷ অবশ্যি আল্লাহর কাছে কাজের প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে ৷
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ
أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ ۚ وَمَن
يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ﴾
২৩) যে
ঈমানদারগণ! তোমাদের বাপ ও ভাইয়েরা যদি ঈমানের ওপর কুফরীকে প্রাধান্য দেয়
তাহলে তাদেরকেও নিজেদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না৷ তোমাদের মধ্যে যারা
তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে তারাই জালেম ৷
﴿قُلْ
إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ
وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ
كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ
وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ
اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾
২৪)
হে নবী! বলে দাও, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান ও তোমাদের ভাই
তোমাদের স্ত্রী ,তোমাদের আত্মীয় -স্বজন , তোমাদের উপার্জিত সম্পদ ,
তোমাদের যে ব্যবসায়ে মন্দা দেখা দেয়ার ভয়ে তোমরা তটস্থ থাক এবং তোমাদের
যে বাসস্থানকে তোমরা খুবই পছন্দ কর-এসব যদি আল্লাহ ও তার রসূল এবং তার পথে
জিহাদ করার চাইতে তোমাদের কাছে বেশী প্রিয় হয়, তাহলে আল্লাহর ফায়সালা
তোমাদের কাছে না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা কর ২২ আল্লাহ ফাসেকদেরকে কখনো সত্য পথের সন্ধান দেন না৷
﴿لَقَدْ
نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِي مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ
أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ
عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ﴾
২৫)
এর আগে আল্লাহ বহু ক্ষেত্রে তোমাদের সাহায্য করছেন৷ এই তো সেদিন,
হুনায়েন যুদ্ধের দিন (তাঁর সাহায্যের অভাবনীয় রূপ তোমরা দেখছো), ২৩
সেদিন তোমাদের মনে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের অহমিকা ছিল৷ কিন্তু তা
তোমাদের কোন কাজে আসেনি ৷ আর এত বড় বিশাল পৃথিবীও তোমাদের জন্য সংকুচিত
হয়ে গিয়েছিল এবং তোমরা পেছনে ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে ৷
﴿ثُمَّ
أَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ
وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ
وَذَٰلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ﴾
২৬) তারপর আল্লাহ তার প্রশান্তি
নাযিল করেন তাঁর রসূলের ওপর ও মুমিনদের ওপর এবং সেনাদল নামান যাদেরকে
তোমরা চোখে দেখতে পাচ্ছিলে না৷ এবং সত্য অস্বীকারকারীদের শাস্তি দেন৷
কারণ যারা সত্য অস্বীকার করে এটাই তাদের প্রতিফল৷
﴿ثُمَّ يَتُوبُ اللَّهُ مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
২৭) তারপর (তোমরা এও দেখছো) এভাবে শাস্তি দেবার পর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাওবার তাওফীকও দান করেন৷ ২৪ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْمُشْرِكُونَ نَجَسٌ فَلَا
يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هَٰذَا ۚ وَإِنْ
خِفْتُمْ عَيْلَةً فَسَوْفَ يُغْنِيكُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ إِن شَاءَ ۚ
إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
২৮) হে ঈমানদারগণ! মুশরিকরা তো অপবিত্র, কাজেই এ বছরের পর তারা যেন আর মসজিদে হারামের কাছে না আসে৷ ২৫
আর যদি তোমাদের দারিদ্রের ভয় থাকে, তাহলে আল্লাহ চাইলে তার নিজ অনুগ্রহে
শীঘ্রই তোমাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন ৷ আল্লাহ সবকিছু জানেন ও তিনি
প্রজ্ঞাময় ৷
﴿قَاتِلُوا
الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا
يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ
الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ
عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ﴾
২৯) আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ ও পরকালের ঈমান আনে না ২৬ যা কিছু আল্লাহ ও তার রসূল গণ্য করেছেন তাকে হারাম করো না ২৭ এবং সত্য দীনকে নিজেদের দীনে পরিণত করে না, তাদের সাথে যুদ্ধ করো যে পর্যন্ত না তারা নিজের হাতে জিযিয়া দেয় ও পদানত হয়ে থাকে৷ ২৮
﴿وَقَالَتِ
الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ
ابْنُ اللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ ۖ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ
الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَبْلُ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنَّىٰ
يُؤْفَكُونَ﴾
৩০) ইহুদীরা বলে, উযাইর আল্লাহর পুত্র ২৯
এবং খৃস্টানরা বলে, মসীহ আল্লাহর পুত্র৷এগুলো একেবারেই আজগুবী ও উদ্ভট
কথাবার্তা৷ তাদের পূর্বে যারা কুফরিতে লিপ্ত হয়েছিল তাদের দেখাদেখি তারা
এগুলো নিজেদের মুখে উচ্চারণ করে থাকে৷ ৩০ আল্লাহর অভিশাপ পড়ুক তাদের ওপর, তারা কোথা থেকে ধোকা খাচ্ছে!
﴿اتَّخَذُوا
أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ
وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَٰهًا
وَاحِدًا ۖ لَّا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
৩১) তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের উলামা ও দরবেশদেরকে নিজেদের খোদায় পরিণত করেছে৷ ৩১
এবং এভাবে মারয়াম পুত্র মসীহকেও৷ অথচ তাদের মা’বুদ ছাড়া আর কারোর বন্দেগী
কারার হুকুম দেয়া হয়নি, এমন এক মাবুদ যিনি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্যতা
সম্পন্ন আর কেউ নেই৷ তারা যেসব মুশরিকী কথা বলে তা থেকে তিনি পাক পবিত্র৷
﴿يُرِيدُونَ
أَن يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا
أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ﴾
৩২) তারা চায় তাদের
মুখের ফুৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে ৷ কিন্তু আল্লাহ তার আলোকে
পূর্ণতা দান না করে ক্ষান্ত হবেন না, তা কাফেরদের কাছে যতই অপ্রীতিকর হোক
না কেন ৷
﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ﴾
৩৩) আল্লাহই তার রসূলকে পথনির্দেশ ও সত্য দীন সহকারে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি একে সকল প্রকার দীনের ওপর বিজয়ী করেন, ৩২ মুশরিকরা একে যতই অপছন্দ করুক না কেন৷
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْأَحْبَارِ
وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ
وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۗ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ
وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم
بِعَذَابٍ أَلِيمٍ﴾
৩৪) হে ঈমানদারগণ! এ আহলে কিতাবদের অধিকাংশ আলেম ও
দরবেশের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা মানুষের ধন -সম্পদ অন্যায় পদ্ধতিতে খায়,
এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে ৷ ৩৩ যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রনাময় আযাবের সুখবর দাও৷
﴿يَوْمَ
يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ
وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ
فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ﴾
৩৫) একদিন আসবে যখন এ সোনা ও
রূপাকে জাহান্নামের আগুণে উত্তপ্ত করা হবে, অতপর তারই সাহায্যে তাদের
কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে দাগ দেয়া হবে- এ সেই সম্পদ যা তোমরা নিজেদের
জন্য জমা করেছিলে৷ নাও, এখন তোমাদের জমা করা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ কর৷
﴿إِنَّ
عِدَّةَ الشُّهُورِ عِندَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ
اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ
حُرُمٌ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ ۚ فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ
أَنفُسَكُمْ ۚ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ
كَافَّةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ﴾
৩৬) আসলে যখন আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তখন থেকেই আল্লাহর লিখন ও গণনায় মাসের সংখ্যা বারো চলে আসছে৷ ৩৪ এর মধ্যে চারটি হারাম মাস৷ এটিই সঠিক বিধান৷ কাজেই এ চার মাসের নিজেদের ওপর জুলুম করো না ৷ ৩৫ আর মুশরিকদের সাথে সবাই মিলে লড়াই করো যেমন তারা সবাই মিলে তোমাদের সাথে লড়াই করে৷ ৩৬ এবং জেনে রাখো আল্লাহ মুক্তাকীদের সাথেই আছেন৷
﴿إِنَّمَا
النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْرِ ۖ يُضَلُّ بِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا
يُحِلُّونَهُ عَامًا وَيُحَرِّمُونَهُ عَامًا لِّيُوَاطِئُوا عِدَّةَ مَا
حَرَّمَ اللَّهُ فَيُحِلُّوا مَا حَرَّمَ اللَّهُ ۚ زُيِّنَ لَهُمْ سُوءُ
أَعْمَالِهِمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ﴾
৩৭)
“নাসী” (মাসকে পিছিয়ে দেয়া) তো কুফরীর মধ্যে আরো একটি কুফরী কর্ম, যার
সাহায্যে এ কাফেদের কে ভ্রষ্টতায় লিপ্ত করা হয়ে থাকে৷ কোন বছর একটি মাসকে
হালাল করে নেয় এবং কোন বছর তাকে আবার হারাম করে নেয়, যাতে আল্লাহর হারাম
মাসের সংখ্যাও পুরা করতে পারে এবং আল্লাহর হারাম করাকেও হালাল করতে পারে৷ ৩৭ তাদের খারাপ কাজগুলোকে তাদের জন্য শোভনীয় করে দেয়া হয়েছে৷ আল্লাহ সত্য- অস্বীকারকারীদেরকে হেদায়াত দান করেন না৷
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انفِرُوا فِي
سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ ۚ أَرَضِيتُم بِالْحَيَاةِ
الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي
الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ﴾
৩৮) হে ঈমানদারগণ! ৩৮
তোমাদের কী হলো , যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে বের হতে বলা হলো, অমনি
তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাকলে? তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবন
পছন্দ করে নিয়েছো? যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখো, দুনিয়ার জীবনের এমন
সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুব সামান্য বলে প্রমাণিত হবে৷ ৩৯
﴿إِلَّا
تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا
غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ
قَدِيرٌ﴾
৩৯) তোমরা যদি না বের হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন ৪০ এবং তোমাদের জায়গায় আর একটি দলকে ওঠাবেন, ৪১ আর তোমরা আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷ তিনি সব জিনিসের ওপর শক্তিশালী৷
﴿إِلَّا
تَنصُرُوهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللَّهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِينَ كَفَرُوا
ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَارِ إِذْ يَقُولُ لِصَاحِبِهِ لَا
تَحْزَنْ إِنَّ اللَّهَ مَعَنَا ۖ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ
وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِينَ
كَفَرُوا السُّفْلَىٰ ۗ وَكَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا ۗ وَاللَّهُ
عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
৪০) তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন
পরোয়া নেই৷ আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে
দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার
মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের
সাথে আছেন৷ ৪২
সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং
এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের
বক্তব্যকে নীচু করে দেন৷ আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই৷আল্লাহ
পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়৷
﴿انفِرُوا
خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي
سَبِيلِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
৪১)
-বের হও, হালকা, কিংবা ভারী যাই হওনা কেন, এবং জিহাদ করো আল্লাহর পথে
নিজের ধন-প্রাণ দিয়ে৷ এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে৷ ৪৩
﴿لَوْ
كَانَ عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا لَّاتَّبَعُوكَ وَلَٰكِن
بَعُدَتْ عَلَيْهِمُ الشُّقَّةُ ۚ وَسَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَوِ
اسْتَطَعْنَا لَخَرَجْنَا مَعَكُمْ يُهْلِكُونَ أَنفُسَهُمْ وَاللَّهُ
يَعْلَمُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ﴾
৪২) হে নবী! যদি সহজ লাভের সম্ভবনা
থাকতো এবং সফর হালকা হতো, তাহলে তারা নিশ্চয়ই তোমার পেছনে চলতে উদ্যত
হতো৷ কিন্তু তাদের জন্য তো এ পথ বড়ই কঠিন হয়ে গেছে৷ ৪৪
এখন তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলবে, যদি আমরা চলতে পারতাম তাহলে অবশ্যি
তোমাদের সাথে চলতাম৷ তারা নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে৷ আল্লাহ
ভালো করেই জানেন তারা মিথ্যাবাদী৷
﴿عَفَا اللَّهُ عَنكَ لِمَ أَذِنتَ لَهُمْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَتَعْلَمَ الْكَاذِبِينَ﴾
৪৩)
হে নবী! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন, তুমি তাদের অব্যাহতি দিলে কেন? (তোমরা
নিজের তাদের অব্যাহতি না দেয়া উচিত ছিল) এভাবে তুমি জানতে পারতে কারা
সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক৷ ৪৫
﴿لَا
يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَن
يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ
بِالْمُتَّقِينَ﴾
৪৪) যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, তারা
কখনো তোমার কাছে তাদের ধনও প্রাণ দিয়ে জিহাদ করা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার
জন্য আবেদন জানাবে না৷ আল্লাহ মুত্তাকীদের খুব ভাল করে জানেন৷
﴿إِنَّمَا
يَسْتَأْذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِي رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ﴾
৪৫)
এমন আবেদন তো একমাত্র তারাই করে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান
রাখে না, যাদের মনে রয়েছে সন্দেহ এবং এ সন্দেহের দোলায় তারা দোদুল্যমান৷ ৪৬
﴿وَلَوْ
أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ
انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ﴾
৪৬)
যদি সত্যি সত্যিই তাদের বের হবার ইচ্ছা থাকতো তাহলে তারা সে জন্য কিছু
প্রস্তুতি গ্রহণ করতো৷ কিন্তু তাদের অংশগ্রহণ আল্লাহ কাছে পছন্দনীয় ছিল
না৷ ৪৭ তাই তিনি তাদের শিথিল করে দিলেন এবং বলে দেয়া হলোঃ বসে থাকো, যারা বসে আছে তাদের সাথে ৷
﴿لَوْ
خَرَجُوا فِيكُم مَّا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا
خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ
وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ﴾
৪৭) যদি তারা তোমাদের সাথে বের
হতো তাহলে তোমাদের মধ্যে অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বাড়াতো না ৷ তারা ফিতনা
সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের মধ্যে প্রচেষ্টা চালাতো৷ আর তোমাদের লোকদের
অবস্থা হচ্ছে, তাদের মধ্যে এখনো এমন লোক আছে যারা তাদের কথা আড়ি পেতে
শোনে৷ আল্লাহ এ জালেমদের খুব ভাল করেই চেনেন৷
﴿لَقَدِ
ابْتَغَوُا الْفِتْنَةَ مِن قَبْلُ وَقَلَّبُوا لَكَ الْأُمُورَ حَتَّىٰ
جَاءَ الْحَقُّ وَظَهَرَ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৪৮) এর
আগেও এরা ফিতনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে এবং তোমাদের ব্যর্থ করার জন্য ঘুরিয়ে
ফিরিয়ে বিভিন্ন ধরনের কৌশল খাটিয়েছে৷ এ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাদের ইচ্ছার
বিরুদ্ধে সত্য এসে গেছে এবং আল্লাহ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে৷
﴿وَمِنْهُم
مَّن يَقُولُ ائْذَن لِّي وَلَا تَفْتِنِّي ۚ أَلَا فِي الْفِتْنَةِ
سَقَطُوا ۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَافِرِينَ﴾
৪৯) তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে বলে আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে পাপের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না ৷ ৪৮ শুনে রাখো, এরা তো ঝুঁকির মধ্যেই পড়ে আছে ৪৯ এবং জাহান্নাম এ কাফেরদের ঘিরে রেখেছে৷ ৫০
﴿إِن
تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ ۖ وَإِن تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُوا قَدْ
أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِن قَبْلُ وَيَتَوَلَّوا وَّهُمْ فَرِحُونَ﴾
৫০)
তোমরা ভাল কিছু হলে তা তাদের কষ্ট দেয় এবং তোমার ওপর কোন বিপদ এলে তারা
খুশী মনে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে, “ভালই হয়েছে, আমরা আগে ভাগেই আমাদের
ব্যাপার সেরে নিয়েছি”৷
﴿قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا ۚ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ﴾
৫১)
তাদের বলে দাও, “আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা ছাড়া আর কোন
(ভাল বা মন্দ )কিছুই আমাদের হয় না৷ আল্লাহই আমাদের অভিভাবক ও কার্যনির্বাহক
এবং ঈমানদরদের তাঁর ওপরই ভরসা করা উচিত”৷ ৫১
﴿قُلْ
هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ ۖ وَنَحْنُ
نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَن يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِّنْ عِندِهِ أَوْ
بِأَيْدِينَا ۖ فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ﴾
৫২) তাদের বলে দাও, “তোমরা আমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো তা দুটি ভালর একটি ছাড়া আর কি? ৫২
অন্যদিকে আমরা তোমাদের ব্যাপারে যে জিনিসের অপেক্ষায় আছি তা হচ্চে এই যে
আল্লাহ হয় নিজেই তোমাদের শাস্তি দেবেন, না হয় আমাদের হাত দিয়ে দেয়াবেন?
তাহলে এখন তোমরা অপেক্ষা করোএবং আমরা ও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় থাকছি”৷
﴿قُلْ أَنفِقُوا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمْ ۖ إِنَّكُمْ كُنتُمْ قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾
৫৩) তাদের বলে দাও, “তোমরা নিজেদের ধন-সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সানন্দে ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে ব্যয় কর, ৫৩ তা গৃহীত হবে না৷ কারণ তোমরা ফাসেক গোষ্ঠী”৷
﴿وَمَا
مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ
كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا
وَهُمْ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ﴾
৫৪)
তাদের দেয়া সম্পদ গৃহীত না হবার এ ছাড়া আর কোন কারন নেই যে, তারা আল্লাহ ও
তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে, নামাযের জন্য যখন আসে আড়মোড় ভাংতে ভাংতে
আসে এবং আল্লাহর পথে খরচ করলে তা করে অনিচ্ছাকৃতভাবে ৷
﴿فَلَا
تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ
لِيُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ
وَهُمْ كَافِرُونَ﴾
৫৫) তাদের ধন-দৌলত ও সন্তানের আধিক্য দেখে তোমরা
প্রতারিত হয়ো না৷ আল্লাহ চান , এ জিনিসগুলোর মাধ্যমে দুনিয়ার জীবনে তাদের
শাস্তি দিতে৷ ৫৪ আর তারা যদি প্রাণও দিয়ে দেয়, তাহলে তখন তারা থাকবে সত্য অস্বীকার করার অবস্থায়৷ ৫৫
﴿وَيَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنَّهُمْ لَمِنكُمْ وَمَا هُم مِّنكُمْ وَلَٰكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ﴾
৫৬)
তারা আল্লাহর কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা তোমাদেরই লোক৷ অথচ তারা মোটেই
তোমাদের অন্তরভুক্ত নয়৷ আসলে তারা এমন একদল লোক যারা তোমাদের ভয় করে৷
﴿لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَّوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ﴾
৫৭)
যদি তারা কোন আশ্রয় পেয়ে যায় অথবা কোন গিরি -গুহা কিংবা ভিতরে প্রবেশ
করার মত কোন জায়গা , তাহলে দৌড়ে গিয়ে সেখানে লুকিয়ে থাকবে৷ ৫৬
﴿وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُوا مِنْهَا رَضُوا وَإِن لَّمْ يُعْطَوْا مِنْهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ﴾
৫৮)
হে নবী! তাদের কেউ কেউ সাদকাহ বন্টনের ব্যাপারে তোমার বিরুদ্ধে আপত্তি
জানাচ্ছে৷ এ সম্পদ থেকে যদি তাদের কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা খুশী হয়ে যায়,
আর না দেয়া হলে বিগড়ে যেতে থাকে৷ ৫৭
﴿وَلَوْ
أَنَّهُمْ رَضُوا مَا آتَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَقَالُوا حَسْبُنَا
اللَّهُ سَيُؤْتِينَا اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَرَسُولُهُ إِنَّا إِلَى
اللَّهِ رَاغِبُونَ﴾
৫৯) কতই না ভাল হতো, আল্লাহ ও তার রসূল যা কিছুই তাদের দিয়েছিলেন তাতে যদি তারা সন্তুষ্ট থাকতো৷ ৫৮
এবং বলতো, “আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ঠ৷ তিনি নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের
আরো অনেক কিছু দেবেন এবং তাঁর রসূলও আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন৷ ৫৯ আমরা আল্লাহরই প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছি”৷ ৬০
﴿إِنَّمَا
الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا
وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي
سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ
عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
৬০) এ সাদকাগুলো তো আসলে ফকীর ৬১ মিসকীনদের ৬২ জন্য ৷ আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত ৬৩ এবং যাদের জন্য মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য৷ ৬৪ তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ৬৫ ঋণগ্রস্ততের সাহায্য করার, ৬৬ আল্লাহর পথে ৬৭ এবং মুসাফিরদের উপকারে ৬৮ ব্যয় করার জন্য৷ এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহর সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ৷
﴿وَمِنْهُمُ
الَّذِينَ يُؤْذُونَ النَّبِيَّ وَيَقُولُونَ هُوَ أُذُنٌ ۚ قُلْ أُذُنُ
خَيْرٍ لَّكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَيُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِينَ وَرَحْمَةٌ
لِّلَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ ۚ وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ رَسُولَ اللَّهِ
لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
৬১) তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যারা নিজেদের কথা দ্বারা নবীকে কষ্ট দেয় এবং বলে এ ব্যক্তি অতিশয় কর্ণপাতকারী৷ ৬৯ বলে দাও, “সে এরূপ করে কেবল তোমাদের ভালোর জন্যই৷ ৭০ সে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং ঈমানদারদেরকে বিশ্বাস করে৷ ৭১
তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমানদার তাদের জন্য সে পরিপূর্ণ রহমত ৷আর যারা
আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি”৷
﴿يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ لَكُمْ لِيُرْضُوكُمْ وَاللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَقُّ أَن يُرْضُوهُ إِن كَانُوا مُؤْمِنِينَ﴾
৬২)
তারা তোমাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তোমাদের সামনে কসম খায়৷ অথচ যদি তার
মুমিন হয়ে থাকে তাহলে তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে সন্তুষ্ট করার কথা চিন্তা
করবে, কারণ তারাই এর বেশী হকদার ৷
﴿أَلَمْ
يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَن يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ
جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ﴾
৬৩) তারা
কি জানে না, যারা আল্লাহ ও তার রসূলের মোকাবিলা করে তাদের জন্য রয়েছে
জাহান্নামের আগুন ,তার মধ্য তারা চিরকাল থাকবে৷ এটি একটি বিরাট লাঞ্ছনার
ব্যাপার৷
﴿يَحْذَرُ
الْمُنَافِقُونَ أَن تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُم بِمَا فِي
قُلُوبِهِمْ ۚ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَّا
تَحْذَرُونَ﴾
৬৪) এ মুনাফিকরা ভয় করেছে, মুসলমানদের ওপর এমন একটি সূরা না নাযিল হয়ে যায়, যা তাদের মনের গোপন কথাপ্রকাশ করে দেবে৷ ৭২
হে নবী! তাদের বলে দাও , “বেশ ঠাট্রা করতেই থাকো, তবে তোমরা যে জিনিসটির
প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয় করছো আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন”৷
﴿وَلَئِن
سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ ۚ قُلْ
أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ﴾
৬৫) যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, তোমারা কি কথা বলছিলে?তাহলে তারা ঝটপট বলে দেবে, আমরা তো হাসি-তামাসা ও পরিহাস করছিলাম৷ ৭৩ তাদের বলো, তোমাদের হাসি -তামাসা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রসূলের সাথে ছিল?
﴿لَا
تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ ۚ إِن نَّعْفُ عَن
طَائِفَةٍ مِّنكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ﴾
৬৬)
এখন আর ওযর পেশ করো না৷ তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছো, যদি আমরা
তোমাদের একটি দলকে মাফও করে দেই তাহলে আরেকটি দলকে তো আমরা অবশ্যি শাস্তি
দেবো৷ কারণ তারা অপারাধী৷ ৭৪
﴿الْمُنَافِقُونَ
وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ بِالْمُنكَرِ
وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوفِ وَيَقْبِضُونَ أَيْدِيَهُمْ ۚ نَسُوا
اللَّهَ فَنَسِيَهُمْ ۗ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ هُمُ الْفَاسِقُونَ﴾
৬৭) মুনাফিক পুরুষ ও নারী পরষ্পরের দোসর৷ খারাপ কাজের হুকুম দেয়, ভাল কাজের নিষেধ করে এবং কল্যাণ থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে৷ ৭৫ তারা আল্লাহকে ভূলে গেছে ,ফলে আল্লাহও তাদেরকে ভুলে গেছেন৷
﴿وَعَدَ
اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْكُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ
خَالِدِينَ فِيهَا ۚ هِيَ حَسْبُهُمْ ۚ وَلَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَلَهُمْ
عَذَابٌ مُّقِيمٌ﴾
৬৮) নিশ্চিতভাবেই এ মুনাফিকরাই ফাসেক৷ এ মুনাফিক
পুরুষ ও নারী এবং কাফেরদের জন্য আল্লাহ জাহান্নামের আগুণের ওয়াদা করেছেন৷
তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে৷ সেটিই তাদের জন্য উপযুক্ত৷ আল্লাহর অভিশাপ
তাদের ওপর এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব ৷
﴿كَالَّذِينَ
مِن قَبْلِكُمْ كَانُوا أَشَدَّ مِنكُمْ قُوَّةً وَأَكْثَرَ أَمْوَالًا
وَأَوْلَادًا فَاسْتَمْتَعُوا بِخَلَاقِهِمْ فَاسْتَمْتَعْتُم
بِخَلَاقِكُمْ كَمَا اسْتَمْتَعَ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُم بِخَلَاقِهِمْ
وَخُضْتُمْ كَالَّذِي خَاضُوا ۚ أُولَٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي
الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ﴾
৬৯) তোমাদের ৭৬
আচরণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মতোই৷ তারা ছিল তোমাদের চাইতে বেশী
শক্তিশালী এবং তোমাদের চাইতে বেশী সম্পদ ও সন্তানের মালিক৷ তারপর তারা
দুনিয়ায় নিজেদের অংশের স্বাদ উপভোগ করেছে এবং তোমরাও একইভাবে নিজেদের
অংশের স্বাদ উপভোগ করেছো৷ যেমন তারা করেছিল এবং তারা যেমন অনর্থক বিতর্কে
লিপ্ত ছিল তেমনি বিতর্কে তোমরাও লিপ্ত রয়েছো৷ কাজেই তাদের পরিণতি হয়েছে
এই যে, দুনিয়ায় ও আখেরাতে তাদের সমস্ত কাজকর্ম পণ্ড হয়ে গেছে এবং তারাই
ক্ষতিগ্রস্ত৷
﴿أَلَمْ
يَأْتِهِمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ
وَثَمُودَ وَقَوْمِ إِبْرَاهِيمَ وَأَصْحَابِ مَدْيَنَ وَالْمُؤْتَفِكَاتِ ۚ
أَتَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ ۖ فَمَا كَانَ اللَّهُ
لِيَظْلِمَهُمْ وَلَٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ﴾
৭০) তাদের ৭৭
কাছে কি তাদের পূর্ববর্তীদের ইতিহাস পৌছেনি? নূহের জাতির , আদ, সামূদ, ও
ইবরাহীমের জাতির,মাদইয়ানের অধিবাসীদের এবং যে জনবসতিগুলো উল্টে দেয়া
হয়েছিল সেগুলোর? ৭৮
তাদের রসূলগণ সুষ্পষ্ট নিশানীসহ তাদের কাছে এসেছিলেন৷ এরপর তাদের ওপর
জুলুম করা আল্লাহর কাজ ছিল না বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম
করেছিলেন৷ ৭৯
﴿وَالْمُؤْمِنُونَ
وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ يَأْمُرُونَ
بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ
وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ أُولَٰئِكَ
سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ﴾
৭১) মুমিন
পুরুষ ও মুমিন নারী , এরা সবাই পরষ্পরের বন্ধু ও সহযোগী৷ এরা ভাল কাজের
হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয়
এবংআল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্র করে৷ ৮০ এরা এমন লোক যাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাযিল হবেই৷ অবশ্যি আল্লাহ সবার ওপর পরাক্রমশালি এবং জ্ঞানী ও বিজ্ঞ৷
﴿وَعَدَ
اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا
الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ
ۚ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ أَكْبَرُ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ
الْعَظِيمُ﴾
৭২) এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন,
তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহমান হবে
এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে৷ এসব চির সবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে
বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে৷ এটিই
সবচেয়ে বড় সাফল্য৷
﴿يَا
أَيُّهَا النَّبِيُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَالْمُنَافِقِينَ وَاغْلُظْ
عَلَيْهِمْ ۚ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ﴾
৭৩) হে নবী! ৮১ পূর্ণ শক্তি দিয়ে কাফের ও মুনাফিক উভয়ের মোকাবিল করো এবং তাদের প্রতি কঠোর হও৷ ৮২ শেষ পর্যন্ত তাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থান স্থল৷
﴿يَحْلِفُونَ
بِاللَّهِ مَا قَالُوا وَلَقَدْ قَالُوا كَلِمَةَ الْكُفْرِ وَكَفَرُوا
بَعْدَ إِسْلَامِهِمْ وَهَمُّوا بِمَا لَمْ يَنَالُوا ۚ وَمَا نَقَمُوا
إِلَّا أَنْ أَغْنَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ مِن فَضْلِهِ ۚ فَإِن
يَتُوبُوا يَكُ خَيْرًا لَّهُمْ ۖ وَإِن يَتَوَلَّوْا يُعَذِّبْهُمُ
اللَّهُ عَذَابًا أَلِيمًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَمَا لَهُمْ فِي
الْأَرْضِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ﴾
৭৪) তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে খেয়ে বলে, আমরা ও কথা বলিনি ৷অথচ তারা নিশ্চয়ই সেই কুফরীর কথাটা বলেছে ৷ ৮৩ তারা ইসলাম গ্রহনের পর কুফরী অবলম্বন করেছে৷ তারা এমনসব কিছু করার সংকল্প করেছিল যা করতে পারেনি৷ ৮৪ আল্লাহ ও তাঁর রসূল নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দিয়েছেন বলেই তাদের এত ক্রোধ ও আক্রোশ ! ৮৫
এখন যদি তারা নিজেদের এহন আচরণ থেকে বিরত হয়, তাহলে তাদের জন্যই ভাল৷ আর
যদি বিরত না হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে অত্যন্ত
যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন,এবং পৃথিবীতে তাদের পক্ষ অবলম্বনকারী ও
সাহায্যকারী কেউ থাকবে না৷
﴿وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللَّهَ لَئِنْ آتَانَا مِن فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُونَنَّ مِنَ الصَّالِحِينَ﴾
৭৫)
তাদের মধ্যে এমনও কিছু লোক আছে যারা আল্লাহর কাছে অংগীকার করেছিল, যদি
তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের ধন্য করেন তাহলে আমরা দান করবো এবং সৎ হয়ে
যাবো৷
﴿فَلَمَّا آتَاهُم مِّن فَضْلِهِ بَخِلُوا بِهِ وَتَوَلَّوا وَّهُم مُّعْرِضُونَ﴾
৭৬)
কিন্তু যখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে বিত্তশালী করে দিলেন তখন তারা
কার্পণ্য করতে লাগলো এবং নিজেদের অংগীকার থেকে এমনভাবে পিছটান দিল যে, তার
কোন পরোয়াই তাদের রইল না ৷ ৮৬
﴿فَأَعْقَبَهُمْ
نِفَاقًا فِي قُلُوبِهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ يَلْقَوْنَهُ بِمَا أَخْلَفُوا
اللَّهَ مَا وَعَدُوهُ وَبِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ﴾
৭৭) ফলে তারা
আল্লাহর সাথে এই যে অংগীকার ভংগ করলো এবং এই যে, মিথ্যা বলতে থাকলো, এ
কারণে আল্লাহ তাদের অন্তরে মুনাফিকী বদ্ধমূল করে দিলেন, তার দরাবারে তাদের
উপস্থিতির দিন পর্যন্ত তা তাদের পিছু ছাড়বে না ৷
﴿أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُمْ وَأَنَّ اللَّهَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ﴾
৭৮) তারা কি জানে না, আল্লাহ তাদের গোপন কথাও গোপন সলা-পরামর্শ পর্যন্ত জানেন এবং তিনি সমস্ত অদৃশ্য বিষয়ও পুরোপুরি অবগত?
﴿الَّذِينَ
يَلْمِزُونَ الْمُطَّوِّعِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فِي الصَّدَقَاتِ
وَالَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُونَ مِنْهُمْ ۙ
سَخِرَ اللَّهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
৭৯) (তিনি এমনসব
কৃপণ ধণীদেরকে ভাল করেই জানেন) যারা ঈমানদেরদের সন্তোষ ও আগ্রহ সহকারে
আর্থিক ত্যাগ স্বীকারের প্রতি দোষ ও অপবাদ আরোপ করে এবং যাদের কাছে
(আল্লাহর পথে দান করার জন্য) নিজেরা কষ্ট সহ্য করে যা কিছু দান করে তাছাড়া
আর কিছুই নেই, তাদেরকে বিদ্রুপ করে৷ ৮৭ আল্লাহ এ বিদ্রুপকারীদেরকে বিদ্রুপ করেন৷ এদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি৷
﴿اسْتَغْفِرْ
لَهُمْ أَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ إِن تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِينَ
مَرَّةً فَلَن يَغْفِرَ اللَّهُ لَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَفَرُوا
بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ﴾
৮০)
হে নবী! তুমি এ ধরনের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো, তুমি
যদি এদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই
ক্ষমা করবেন না ৷কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে৷ আর
আল্লাহ ফাসেকদেরকে মুক্তির পথ দেখান না৷
﴿فَرِحَ
الْمُخَلَّفُونَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلَافَ رَسُولِ اللَّهِ وَكَرِهُوا أَن
يُجَاهِدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَالُوا
لَا تَنفِرُوا فِي الْحَرِّ ۗ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرًّا ۚ لَّوْ
كَانُوا يَفْقَهُونَ﴾
৮১) যাদেরকে পিছনে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া
হয়েছিল তারা আল্লাহর রসূলের সাথে সহযোগিতা না করারও ঘরে বসে থাকার জন্যে
আনন্দিত হলো এবং তারা নিজেদের ধন-প্রাণ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করতে
অপছন্দ করলো ৷ তারা লোকদেরকে বললো, “এ প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বের হয়ো
না”৷ তাদেরকে বলে দাও,জাহান্নামের আগুন এর চেয়েও বেশী গরম , হায়! যদি তাদের
সেই চেতনা থাকতো!
﴿فَلْيَضْحَكُوا قَلِيلًا وَلْيَبْكُوا كَثِيرًا جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
৮২)
এখন তাদের কম হাসা ও বেশী কাঁদা উচিত৷ কারণ তারা যে গুনাহ উপার্জন করেছে
তার প্রতিদান এ ধরনেরই হয়ে থাকে (যে, সে জন্য তাদের কাঁদা উচিত৷)
﴿فَإِن
رَّجَعَكَ اللَّهُ إِلَىٰ طَائِفَةٍ مِّنْهُمْ فَاسْتَأْذَنُوكَ
لِلْخُرُوجِ فَقُل لَّن تَخْرُجُوا مَعِيَ أَبَدًا وَلَن تُقَاتِلُوا
مَعِيَ عَدُوًّا ۖ إِنَّكُمْ رَضِيتُم بِالْقُعُودِ أَوَّلَ مَرَّةٍ
فَاقْعُدُوا مَعَ الْخَالِفِينَ﴾
৮৩) যদি আল্লাহ তাদের মধ্যে তোমাকে
ফিরিয়ে নিয়ে যান এবং আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কোন দল জিহাদ করার জন্য
তোমার কাছে অনুমতি চায় তাহলে পরিষ্কার বলে দেবে, “এখন আর তোমরা কখখনো
আমরা সাথে যেতে পারবে না এবং আমার সংগী হয়ে কোন দুশমনের সাথে লড়াইও করতে
পারবে না৷ তোমরা তো প্রথমে বসে থাকাই পছন্দ করেছিলে, তাহলে এখন যারা ঘরে
বসে আছে তাদের সাথে তোমারাও বসে থাকো”৷
﴿وَلَا
تُصَلِّ عَلَىٰ أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ
قَبْرِهِ ۖ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ
فَاسِقُونَ﴾
৮৪) আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার
জানাযার নামাযও তুমি কখ্খনো পড়বে না৷ এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে
না৷ কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে
ফাসেক অবস্থায়৷ ৮৮
﴿وَلَا
تُعْجِبْكَ أَمْوَالُهُمْ وَأَوْلَادُهُمْ ۚ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ أَن
يُعَذِّبَهُم بِهَا فِي الدُّنْيَا وَتَزْهَقَ أَنفُسُهُمْ وَهُمْ
كَافِرُونَ﴾
৮৫) তাদের ধনাঢ়্যতা ও তাদের অধিক সংখ্যক সন্তান সন্তুতি
তোমাকে যেন প্রতারিত না করে৷ আল্লাহ তো তাদেরকে এ ধন ও সম্পদের সাহায্যে এ
দুনিয়ায়ই সাজা দেবার সংকল্প করে ফেলেছেন এবং কাফের থাকা অবস্থায় তাদের
মৃত্যু হোক-এটাই চেয়েছেন৷
﴿وَإِذَا
أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ
اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ
الْقَاعِدِينَ﴾
৮৬) আল্লাহকে মেনে চলো এবং তাঁর রসূলের সহযোগী হয়ে
জিহাদ করো, এ মর্মে যখনই কোন সূরা নাযিল হয়েছে তোমরা দেখেছো, তাদের
মধ্যে যারা সমার্থবান ছিল তারাই তোমাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে , জিহাদে
অংশগ্রহন করা থেকে তাদেরকে রেহাই দেয়া হোক৷ এবং তারা বলেছে, আমাদের ছেড়ে
দাও৷ যারা বসে আছে তাদের সাথে আমরা বসে থাকবো৷
﴿رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ﴾
৮৭) তারা গৃহবাসীনি মেয়েদের সাথে শামিল হয়ে ঘরে থাকতে চেয়েছে এবং তাদের দিলে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে৷ তাই তারা কিছুই বুঝতে পারছে না৷ ৮৯
﴿لَٰكِنِ
الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ جَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ
وَأَنفُسِهِمْ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمُ الْخَيْرَاتُ ۖ وَأُولَٰئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُونَ﴾
৮৮) অন্যদিকে রসূল ও তার ঈমানদার সাথীরা নিজেদের জান-মাল দিয়ে জিহাদ করেছে৷ সমস্ত কল্যাণ এখন তাদের জন্য এবং তারাই সফলকাম হবে৷
﴿أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
৮৯)
আল্লাহ তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন৷ যার নিম্নদেশে
স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হচ্ছে৷ তার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল ৷ এটাই মহা
সাফল্য৷
﴿وَجَاءَ
الْمُعَذِّرُونَ مِنَ الْأَعْرَابِ لِيُؤْذَنَ لَهُمْ وَقَعَدَ الَّذِينَ
كَذَبُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ سَيُصِيبُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ
عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
৯০) গ্রামীণ আরবের ৯০
মধ্যে থেকেও অনেক লোক এলো৷ তারা ওযর পেশ করলো , যাতে তাদেরকেও পিছনে
থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়৷ যারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে ঈমানের মিথ্যা
অংগীকার করেছিল তারাই এভাবে বসে রইল৷ এ গ্রামীণ আরবদের মধ্য থেকে যারাই
কুফরীর পথ অবলম্বন করেছে ৯১ শীঘ্রই তারা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে ৷
﴿لَّيْسَ
عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا
يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ مَا
عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
৯১)
দুর্বল ও রুগ্ন লোকেরা এবং যেসব লোক জিহাদে শরীক হবার জন্য পাথেয় পায়
না, তারা যদি পিছনে থেকে যায় তাহলে তাতে কোন ক্ষতি নেই, যখন তারা
আন্তরিকতভাবে আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত ৷ ৯২ এ ধরনের সৎকর্মশীলদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন অবকাশই নেই৷ আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করূণাময়৷
﴿وَلَا
عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا
أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ
حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ﴾
৯২) অনুরূপভাবে তাদের
বিরুদ্ধে ও অভিযোগের কোন সুযোগ নেই যারা নিজেরা এসে তোমার কাছে আবেদন
করেছিল, তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে কিন্তু তুমি বলেছিলে আমি তোমাদের
জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারছি না৷ তখন তারা বাধ্য হয়ে ফিরে গিয়েছিল৷
তখন তাদের অবস্থা এ ছিল যে , তাদের চোখে দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল এবং
নিজেদের অর্থ ব্যয়ে জিহাদে শরীক হতে অসমর্থ হবার দরূন তাদের মনে বড়ই কষ্ট
ছিল৷ ৯৩
﴿إِنَّمَا
السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاءُ ۚ
رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ
قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ﴾
৯৩) অবশ্যি অভিযোগে তাদের
বিরুদ্ধে যারা বিত্তশালী হবার পরও জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে তোমার কাছে
অব্যাহতি চাচ্ছে৷ তারা পুরবাসিনীদের সাথে থাকাই পছন্দ করেছে৷ আল্লাহ তাদের
দিলে মোহর মেরে দিয়েছেন তাই তারা এখন কিছুই জানে না ৷(যে আল্লাহর কাজে
তাদের এহেন কর্মনীতি গ্রহণের ফল কী দাঁড়াবে৷)
﴿يَعْتَذِرُونَ
إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ ۚ قُل لَّا تَعْتَذِرُوا لَن
نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللَّهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ ۚ وَسَيَرَى
اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ
وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
৯৪)
তোমরা যখন ফিরে তাদের কাছে পৌছবে তখন তারা নানা ধরনের ওযর পেশ করতে থাকবে৷
কিন্তু তুমি পরিষ্কার বলে দেবে, “বাহানাবাজী করো না, আমরা তোমাদের কোন
কথাই বিশ্বাস করবো না৷ তোমাদের অবস্থা আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন৷ এখন
আল্লাহ ও তার রসূল তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ করবেন৷ তারপর তোমাদেরকে তারই
দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে৷ যিনি প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছুই জানেন এবং তোমরা কি
কাজ করছিলে তা তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন”৷
﴿سَيَحْلِفُونَ
بِاللَّهِ لَكُمْ إِذَا انقَلَبْتُمْ إِلَيْهِمْ لِتُعْرِضُوا عَنْهُمْ ۖ
فَأَعْرِضُوا عَنْهُمْ ۖ إِنَّهُمْ رِجْسٌ ۖ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ
جَزَاءً بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
৯৫) তোমরা ফিরে এলে তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে, যাতে তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা করো৷ ঠিক আছে,তোমরা অবশ্যি তাদেরকে উপেক্ষা করো৷ ৯৪ কারণ তারা অপবিত্র এবং তাদের আসল আবাস জাহান্নাম৷ তাদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ এটি তাদের ভাগ্যে জুটবে৷
﴿يَحْلِفُونَ لَكُمْ لِتَرْضَوْا عَنْهُمْ ۖ فَإِن تَرْضَوْا عَنْهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَرْضَىٰ عَنِ الْقَوْمِ الْفَاسِقِينَ﴾
৯৬)
তারা তোমাদের সামনে কসম খাবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও৷ অথচ
তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হলেও আল্লাহ কখনো এহেন ফাসেকদের প্রতি সন্তুষ্ট
হবেন না৷
﴿الْأَعْرَابُ
أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلَّا يَعْلَمُوا حُدُودَ مَا
أَنزَلَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
৯৭) এ
বেদুইন আরবরা কুফরী ও মুনাফিকীতে বেশী কঠোর এবং আল্লাহ তার রসূলের প্রতি
যে দীন নাযিল করেছেন তার সীমারেখা সম্পর্কে তাদের অজ্ঞ হওয়ার সম্ভবনা বেশী৷ ৯৫ আল্লাহ সবকিছু জানেন , তিনি জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময় ৷
﴿وَمِنَ
الْأَعْرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغْرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ
الدَّوَائِرَ ۚ عَلَيْهِمْ دَائِرَةُ السَّوْءِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ
عَلِيمٌ﴾
৯৮) এ গ্রামীণদের মধ্যে এমন এমন লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করলে তাকে নিজেদের ওপর জোরপূর্বক চাপানো অর্থদণ্ড মনে করে ৯৬
এবং তোমাদের ব্যাপারে কালের আবর্তনের প্রতীক্ষা করছে (অর্থাৎ তোমরা কোন
বিপদের মুখে পড়লে যে শাসন ব্যবস্থার আনুগত্যের শৃংখল তোমরা তাদের গলায়
বেঁধে দিয়েছ তা তারা গলা থেকে নামিয়ে ফেলবে৷) অথচ মন্দের আবর্তন তাদের ওপরই
চেপে বসেছে৷ আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন৷
﴿وَمِنَ
الْأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَتَّخِذُ
مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللَّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ ۚ أَلَا
إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ ۚ سَيُدْخِلُهُمُ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ ۗ
إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
৯৯) আবার এ গ্রামীণদের মধ্য থেকে
কিছু লোক এমনও আছে যারা আল্লাহ ও কিয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান রাখে এবং যা
কিছু খরচ করে তাকে আল্লাহর দরবারে নৈকট্য লাভের এবং রসূলের কাছ থেকে রহমতের
দোয়া লাভের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে৷ হাঁ, অবশ্যি তা তাদের জন্য
নৈকট্যলাভের উপায় এবং আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে রহমতের মধ্যে প্রবেশ করাবেন৷
অবশ্যি আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
﴿وَالسَّابِقُونَ
الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ
اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ
وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ
فِيهَا أَبَدًا ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
১০০) মুহাজির ও
আনসারদের মধ্যে থেকে যারা সবার আগে ঈমানের দাওয়াত গ্রহণ করার ব্যাপারে
উদ্যোগী হয়েছে এবং যারা পরে নিষ্ঠা সহকারে তাদের অনুসরণ করছে আল্লাহ তাদের
প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে৷ আল্লাহ
তাদের জন্য এমন বাগান তৈরী করে রেখেছেন যার নিম্নদেশে ঝরণাধারা প্রবাহিত
হবে এবং তারা তার মধ্যে থাকবে চিরকাল৷ এটাই মহা সাফল্য৷
﴿وَمِمَّنْ
حَوْلَكُم مِّنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ ۖ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ ۖ
مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ ۖ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ ۚ
سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٍ﴾
১০১)
তোমাদের আশেপাশে যেসব বেদুইন থাকে তাদের মধ্যে রয়েছে অনেক মুনাফিক৷
অনুরূপভাবে মদীনাবাসীদের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু মুনাফিক, যারা মুনাফিকীতে
পাকাপোক্ত হয়ে গেছে৷ তোমরা তাদেরকে চিন না, আমি চিনি তাদেরকে৷ ৯৭ শীঘ্রই আমি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি দেবো৷ ৯৮ তারপর আরো বেশী বড় শাস্তির জন্য তাদেরকে ফিরিয়া আনা হবে৷
﴿وَآخَرُونَ
اعْتَرَفُوا بِذُنُوبِهِمْ خَلَطُوا عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا
عَسَى اللَّهُ أَن يَتُوبَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ﴾
১০২)
আরো কিছু লোক আছে, যারা নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছে৷ তাদের কাজকর্ম
মিশ্র ধরনের কিছু ভাল, কিছু মন্দ৷ অসম্ভব নয়, আল্লাহ তাদের প্রতি আবার
মেহেরবান হয়ে যাবেন৷ কারণ , তিনি ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷
﴿خُذْ
مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ
عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ﴾
১০৩)
হে নবী! তাদের ধন -সম্পদ থেকে সদকা নিয়ে তাদেরকে পাক পবিত্র করো, (নেকীর
পথে) তাদেরকে এগিয়ে দাও এবং তাদের জন্য রহমতের দোয়া করো৷ তোমার দোয়া
তাদের সান্তনার কারণ হবে৷ আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন৷
﴿أَلَمْ
يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ
وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾
১০৪) তারা কি জানে না, আল্লাহই তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, তাদের দান -খয়রাত গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, ও করুণাময়?
﴿وَقُلِ
اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ ۖ
وَسَتُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم
بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
১০৫) আর হে নবী! তাদেরকে বলে দও, তোমরা কাজ করতে থাকো৷ আল্লাহ তার রসূল ও মুমিনরা তোমাদের কাজের ধারা এখন কেমন থাকে তা দেখবেন৷ ৯৯ তারপর তোমাদের তার দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে সবকিছু জানেন এবং তোমরা কি করতে তা তিনি তোমাদের বলে দেবেন৷ ১০০
﴿وَآخَرُونَ مُرْجَوْنَ لِأَمْرِ اللَّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
১০৬)
অপর কিছু লোকের ব্যাপার এখনো আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় আছে , তিনি চাইলে
তাদেরকে শাস্তি দেবেন, আবার চাইলে তাদের প্রতি নতুন করে অনুগ্রহ করবেন৷
আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনি জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ৷ ১০১
﴿وَالَّذِينَ
اتَّخَذُوا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ
الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِّمَنْ حَارَبَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ مِن
قَبْلُ ۚ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا الْحُسْنَىٰ ۖ وَاللَّهُ
يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ﴾
১০৭) আরো কিছু লোক আছে , যারা
একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে (সত্যের দাওয়াতকে) ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে ,
(আল্লাহর বন্দেগী করার পরিবর্তে) কুফরী কারার জন্য মুমিনদের মধ্যে বিভেদ
সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং (এ বাহ্যিক ইবাদতগাহকে ) এমন এক ব্যক্তির জন্য
গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে যে ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তার রসূলের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল৷ তারা অবশ্যি কসম খেয়ে বলবে , ভালো ছাড়া আর কোন
ইচ্ছাই আমাদের ছিল না৷ কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী , তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী৷
﴿لَا
تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا ۚ لَّمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَىٰ مِنْ
أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِ ۚ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَن
يَتَطَهَّرُوا ۚ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ﴾
১০৮) তুমি কখনো
সেই ঘরে দাঁড়াবে না৷ যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তেতে
প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটি দাঁড়ানোরই (ইবাদতের জন্য) তোমার পক্ষে
অধিকতর সমীচীন৷ সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক -পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং
আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন৷ ১০২
﴿أَفَمَنْ
أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَىٰ تَقْوَىٰ مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٍ خَيْرٌ أَم
مَّنْ أَسَّسَ بُنْيَانَهُ عَلَىٰ شَفَا جُرُفٍ هَارٍ فَانْهَارَ بِهِ فِي
نَارِ جَهَنَّمَ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ﴾
১০৯)
তাহলে তুমি কি মনে করো , যে ব্যক্তি আল্লাহ ভীতি ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের
উপর নিজের ইমারতের ভীত্তি স্থাপন করলো সে ভাল, না যে ব্যক্তি তার ইমারতের
ভিত উঠালো একটি পতাকার স্থিতিহীন ফাঁপা প্রাণ্তের ওপর ১০৩ এবং তা তাকে নিয়ে সোজা জাহান্নামের আগুনে গিয়ে পড়লো? এ ধরনের জালেমদের কে আল্লাহ কখনো সোজা পথ দেখান না৷ ১০৪
﴿لَا يَزَالُ بُنْيَانُهُمُ الَّذِي بَنَوْا رِيبَةً فِي قُلُوبِهِمْ إِلَّا أَن تَقَطَّعَ قُلُوبُهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴾
১১০)
তারা এই যে ইমারত নির্মাণ করেছে এটা সবসময় তাদের মনে সন্দেহের কারণ হয়ে
থাকবে (যার বের হয়ে যাওয়ার আর কোন উপায়ই এখন নেই) যে পর্যন্ত না তাদের
অন্তর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়৷ ১০৫ আল্লাহ অত্যন্ত সচেতন ,জ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ৷
﴿إِنَّ
اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم
بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ
وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ
فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ
الْفَوْزُ الْعَظِيمُ﴾
১১১) প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন৷ ১০৬
তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এবং মারে ও মরে৷ তাদের প্রতি তাওরাত ,ইনজীল ও
কুরআনে(জান্নাতের ওয়াদা) আল্লাহর জিম্মায় একটি পাকাপোক্ত ওয়াদা বিশেষ৷ ১০৭
আর আল্লাহর চাইতে বেশী নিজের ওয়াদা পূরণকারী আর কে আছে? কাজেই তোমরা
আল্লাহর সাথে যে কেনা-বেচা করছো সে জন্য আনন্দ করো৷ এটিই সবচেয়ে বড়
সাফল্য৷
﴿التَّائِبُونَ
الْعَابِدُونَ الْحَامِدُونَ السَّائِحُونَ الرَّاكِعُونَ السَّاجِدُونَ
الْآمِرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّاهُونَ عَنِ الْمُنكَرِ وَالْحَافِظُونَ
لِحُدُودِ اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ﴾
১১২) আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী ১০৮ তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী ১০৯ তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী , অসৎকাজ থেকে বিরতকারী, এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী ১১০ (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনাবেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও!
﴿مَا
كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِينَ آمَنُوا أَن يَسْتَغْفِرُوا
لِلْمُشْرِكِينَ وَلَوْ كَانُوا أُولِي قُرْبَىٰ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ
لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ﴾
১১৩) নবী ও যারা ঈমান এনেছে
তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা, সংগত নয়, তারা তাদের
আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা
জাহান্নামেরই উপযুক্ত৷ ১১১
﴿وَمَا
كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَن مَّوْعِدَةٍ
وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِّلَّهِ
تَبَرَّأَ مِنْهُ ۚ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ﴾
১১৪) ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ ১১২
কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন
তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে৷ যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহভীরু ও
ধৈর্যশীল ছিল৷ ১১৩
﴿وَمَا
كَانَ اللَّهُ لِيُضِلَّ قَوْمًا بَعْدَ إِذْ هَدَاهُمْ حَتَّىٰ يُبَيِّنَ
لَهُم مَّا يَتَّقُونَ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ﴾
১১৫)
লোকদেরকে হেদায়াত দান করার পর আবার গোমরাহীতে লিপ্ত করা আল্লাহর রীতি
নয়, যতক্ষন না তিনি তাদেরকে কোন জিনিস থেকে সংযত হয়ে চলতে হবে তা পরিস্কার
করে জানিয়ে দেন৷ ১১৪ আসলে আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসের জ্ঞান রাখেন৷
﴿إِنَّ
اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۚ
وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ﴾
১১৬) আর
এও সত্য, আসমান ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহর নিয়ন্ত্রনাধীন, জীবন ও মৃত্যু
তাঁরই ইখতিয়ারভুক্ত এবং তোমাদের এমন কোন সহায় ও সাহায্যকারী নেই যে
তোমাদেরকে তাঁর হাত থেকে বাঁচাতে পারে৷
﴿لَّقَد
تَّابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ
الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِن بَعْدِ مَا كَادَ
يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِّنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ ۚ إِنَّهُ
بِهِمْ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
১১৭) আল্লাহ নবীকে মাফ করে দিয়েছেন এবং অত্যন্ত কঠিন সময়ে যে মুহাজির ও আনসারগণ নবীর সাথে সহযোগীতা করেন তাদেরকেও মাফ করে দিয়েছেন৷ ১১৫ যদিও তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোকের দিল বক্রতার দিকে আকৃষ্ট হতে যাচ্ছিল ১১৬ (কিন্তু তারা এ বক্রতার অনুগামী না হয়ে নবীর সহযোগী হয়েছেন৷ফলে) আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিয়েছেন৷ ১১৭ নিসন্দেহে এ লোকদের প্রতি তিনি স্নেহশীল ও মেহেরবান ৷
﴿وَعَلَى
الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّىٰ إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ
الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَن
لَّا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ
لِيَتُوبُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ﴾
১১৮) আর কে তিনজনের ব্যাপার মূলতবী করে দেয়া হয়েছিল তাদেরকেও তিনি মাফ করে দিয়ছেন ১১৮
পৃথিবী তার সমগ্র ব্যাপকতা সত্ত্বেও যখন তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গেলো,
তাদের নিজেদের প্রাণও তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ালো এবং তারা জেনে নিল যে,
আল্লাহর হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিজের রহমতের আশ্রয় ছাড়া আর কোন
আশ্রয়স্থল নেই তখন আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের দিকে ফিরলেন যাতে তারা তার
দিকে ফিরে আসে৷ অবশ্যি আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ ১১৯
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ﴾
১১৯) হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগি হও৷
﴿مَا
كَانَ لِأَهْلِ الْمَدِينَةِ وَمَنْ حَوْلَهُم مِّنَ الْأَعْرَابِ أَن
يَتَخَلَّفُوا عَن رَّسُولِ اللَّهِ وَلَا يَرْغَبُوا بِأَنفُسِهِمْ عَن
نَّفْسِهِ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ لَا يُصِيبُهُمْ ظَمَأٌ وَلَا نَصَبٌ
وَلَا مَخْمَصَةٌ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَطَئُونَ مَوْطِئًا يَغِيظُ
الْكُفَّارَ وَلَا يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَّيْلًا إِلَّا كُتِبَ لَهُم
بِهِ عَمَلٌ صَالِحٌ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ﴾
১২০)
মদীনাবাসী ও তাদের আশপাশে বেদুইনদের জন্য আল্লাহর রসূলকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে
বসে থাকা এবং তার ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে নিজেদের জীবনের চিন্তায় মশগুল হয়ে
যাওয়া কোনক্রমেই সমীচীন ছিল না৷ কারণ আল্লাহর পথে তারা যখনই ক্ষুধা-তৃষ্ণা
ও শারীরিক কষ্ট ভোগ করবে, যখনই এমন পথ অবলম্বন করবে যা সত্য
অমান্যকারীদের কাছে অসহনীয় এবং যখনই কোন দুশমনের ওপর (সত্যের প্রতি
দুশমনির) প্রতিশোধ নেবে তৎক্ষনাৎ তার বদলে তাদের জন্য একটি সৎকাজ লেখা
হবেই৷ এর ব্যতিক্রম কখনো হবে না৷ অবশ্যি আল্লাহর দরবারে সৎ কর্মশীলদের
পরিশ্রম বিফল যায় না৷
﴿وَلَا
يُنفِقُونَ نَفَقَةً صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً وَلَا يَقْطَعُونَ
وَادِيًا إِلَّا كُتِبَ لَهُمْ لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا
كَانُوا يَعْمَلُونَ﴾
১২১) অনুরূপভাবে তারা যখনই (আল্লাহর পথে) কম বা
বেশী কিছু সম্পদ ব্যয় করবে এবং (সংগ্রাম সাধনায়) যখনই কোন উপত্যকা অতিক্রম
করবে, অমনি তা তাদের নামে লেখা হয়ে যাবে, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের এ ভাল
কাজের পুরস্কার দান করেন৷
﴿وَمَا
كَانَ الْمُؤْمِنُونَ لِيَنفِرُوا كَافَّةً ۚ فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ
فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِّيَتَفَقَّهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا
قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمْ لَعَلَّهُمْ يَحْذَرُونَ﴾
১২২)
আর মুমিনদের সবার এক সাথে বের হয়ে পড়ার কোন দরকার ছিল না৷ কিন্তু তাদের
জনবসতির প্রত্যেক অংশের কিছু লোক বেরিয়ে এলে ভাল হতো৷ তারা দীন সম্বন্ধে
জ্ঞান লাভ করতো এবং ফিরে গিয়ে নিজের এলাকার লোকদের কে সতর্ক করতো, যাতে
তারা (অমুসলমানী আচরণ থেকে ) বিরত থাকতো, এমনটি হলো না কেন? ১২০
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ
الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ
مَعَ الْمُتَّقِينَ﴾
১২৩) হে ঈমানদারগণ! সত্য অস্বীকারকারীদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ করো৷ ১২১ তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়৷ ১২২ জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন৷ ১২৩
﴿وَإِذَا
مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُم مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ
هَٰذِهِ إِيمَانًا ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَزَادَتْهُمْ إِيمَانًا
وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ﴾
১২৪) যখন কোন নতুন সূরা নাযিল হয় তখন তাদের
কেউ কেউ (ঠাট্রা করে মুসলমানদের ) জিজ্ঞেস করে, বলো, এর ফলে তোমাদের কার
ঈমান বেড়ে গেছে? (এর জবাব হচ্ছে) যারা ঈমান এনেছে (প্রত্যেকটি অবতীর্ণ
সুরা) যথার্থই ঈমান বাড়িয়েই দিয়েছে এবং তারা এর ফলে আনন্দিত৷
﴿وَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَىٰ رِجْسِهِمْ وَمَاتُوا وَهُمْ كَافِرُونَ﴾
১২৫)
তবে যাদের অন্তরে (মুনাফিকী) রোগ বাসা বেঁধেছিল তাদের পূর্ব কলুষতার ওপর
(প্রত্যেকটি নতুন সূরা) আরো একটি কলুষতা বাড়িয়ে দিয়েছে ১২৪ এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীতে লিপ্ত রয়েছে৷
﴿أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ فِي كُلِّ عَامٍ مَّرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ لَا يَتُوبُونَ وَلَا هُمْ يَذَّكَّرُونَ﴾
১২৬) এরা কি দেখে না, প্রতি বছর এদেরকে দুএকটি পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়? ১২৫ কিন্তু এরপরও এরা তাওবাও করে না কোন শিক্ষাও গ্রহণ করে না৷
﴿وَإِذَا
مَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ نَّظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ هَلْ يَرَاكُم
مِّنْ أَحَدٍ ثُمَّ انصَرَفُوا ۚ صَرَفَ اللَّهُ قُلُوبَهُم بِأَنَّهُمْ
قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ﴾
১২৭) যখন কোন সূরা নাযিল হয়, এরা চোখের ইশারায় একে অন্যকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের কেউ দেখতে পায়নি তো? তারপর চুপে চুপে সরে পড়ে৷ ১২৬ আল্লাহ তাদের মন বিমুখ করে দিয়েছেন কারণ তারা এমন একদল লোক যাদের বোধশক্তি নেই৷ ১২৭
﴿لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴾
১২৮)
দেখো, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূল৷ তোমাদের
ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া তার জন্য কষ্টদায়ক৷ সে তোমাদের কল্যাণকামী ৷
মুমিনদের প্রতি সে স্নেহশীল ও করুণাসিক্ত ৷
﴿فَإِن تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ﴾
১২৯)
- এখন যদি তারা তোমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে হে নবী! তাদেরকে
বলে দাও, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই৷ আমি তার
ওপরই ভরসা করেছি এবং তিনি মহা আরশের অধিপতি”৷
মারয়াম
ভূমিকা
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ كهيعص﴾
১) কা-ফ্ হা-ইয়া-আইন-সা-দ৷
﴿ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا﴾
২) এটি তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ,১ যা তিনি তাঁর বান্দা যাকারিয়ার২ প্রতি করেছিলেন,
﴿إِذْ نَادَىٰ رَبَّهُ نِدَاءً خَفِيًّا﴾
৩) যখন সে চুপে চুপে রবকে ডাকলো৷
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا﴾
৪)
সে বললো, “হে আমার রব! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে, মাথা
বার্ধক্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; হে পরোয়ারদিগার! আমি কখনো তোমার কাছে দোয়া
চেয়ে ব্যর্থ হইনি৷
﴿وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِن وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا﴾
৫) আমি আমার পর নিজের স্বভাব-স্বগোত্রীয়দের অসদাচরণের আশংকা করি৩ এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা৷ (তথাপি) তুমি নিজের বিশেষ অনুগ্রহ বলে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো,
﴿يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آلِ يَعْقُوبَ ۖ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا﴾
৬) যে আমার উত্তরাধিকরী হবে এবং ইয়াকুব বংশেরও উত্তরাধিকারী হবে৷৪ আর হে পরোয়ারদিগার! তাকে একজন পছন্দনীয় মানুষে পরিণত করো”৷
﴿يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَامٍ اسْمُهُ يَحْيَىٰ لَمْ نَجْعَل لَّهُ مِن قَبْلُ سَمِيًّا﴾
৭)
(জবাব দেয়া হলো) “হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্রের সুসংবাদ
দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহইয়া, এ নামে কোন লোক আমি এর আগে সৃষ্টি করিনি৷৫
﴿قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا وَقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا﴾
৮) সে বললো, “হে আমার রব! আমার ছেলে হবে কেমন করে যখন আমার স্ত্রী বন্ধ্যা এবং আমি বুড়ো হয়ে শুকিয়ে গেছি?”
﴿قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا﴾
৯)
জবাব এলো, ”এমনটিই হবে” তোমার রব বলেন, এ তো আমার জন্য সামান্য ব্যাপার
মাত্র, এর আগে আমি তোমাকে সৃষ্টি করেছি যখন তুমি কিছুই ছিলে না!৬
﴿قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّي آيَةً ۚ قَالَ آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا﴾
১০)
যাকারিয়া বললেন, “হে আমার রব! আমার জন্য নিদর্শন স্থির করে দাও”৷ বললেন,
“তোমার জন্য নিদর্শন হচ্ছে তুমি পরপর তিনদিন লোকদের সাথে কথা বলতে পারবে
না”৷
﴿فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوْمِهِ مِنَ الْمِحْرَابِ فَأَوْحَىٰ إِلَيْهِمْ أَن سَبِّحُوا بُكْرَةً وَعَشِيًّا﴾
১১) কাজেই সে মিহরাব৭ থেকে বের হয়ে নিজের সম্প্রদায়ের সামনে এলো এবং ইশারায় তাদেরকে সাঁঝে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করার নির্দেশ দিল৷৮
﴿يَا يَحْيَىٰ خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا﴾
১২) “হে ইয়াহইয়া! আল্লাহর কিতাবকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো”৷৯ আমি তাকে শৈশবেই “হুকুম”১০ দান করেছি
﴿وَحَنَانًا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَاةً ۖ وَكَانَ تَقِيًّا﴾
১৩) এবং নিজের পক্ষ থেকে হৃদয়ের কোমলতা১১ ও পবিত্রতা দান করেছি, আর সে ছিল খুবই আল্লাহভীরু
﴿وَبَرًّا بِوَالِدَيْهِ وَلَمْ يَكُن جَبَّارًا عَصِيًّا﴾
১৪) এবং নিজের পিতামাতার অধিকার সচেতন, সে উদ্ধত ও নাফরমান ছিল না৷
﴿وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا﴾
১৫) শান্তি তার প্রতি যেদিন সে জন্ম লাভ করে এবং যেদিন সে মৃত্যুবরণ করে আর যেদিন তাকে জীবিত করে উঠানো হবে৷১২
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا﴾
১৬) আর(হে মুহাম্মাদ)!এই কিতাবে মারয়ামের অবস্থা বর্ণনা করো৷১৩ যখন সে নিজের লোকদের থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব দিকে নির্জনবাসী হয়ে গিয়েছিল
﴿فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا﴾
১৭) এবং পর্দা টেনে তাদের থেকে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিল৷১৪ এ অবস্থায় আমি তার কাছে নিজের রূহকে অর্থাৎ(ফেরেশতাকে)পাঠালাম এবং সে তার সামনে একটি পূর্ণ মানবিক কায়া নিয়ে হাযির হলো৷
﴿قَالَتْ إِنِّي أَعُوذُ بِالرَّحْمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا﴾
১৮) মারয়াম অকস্মাত বলে উঠলো, ”তুমি যদি আল্লাহকে ভয় করে থাকো তাহলে আমি তোমার হাত থেকে করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি”৷
﴿قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا﴾
১৯) সে বললো, “আমি তো তোমার রবের দূত এবং আমাকে পাঠানো হয়েছে এ জন্য যে, আমি তোমাকে একটি পবিত্র পুত্র দান করবো?”
﴿قَالَتْ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ وَلَمْ أَكُ بَغِيًّا﴾
২০) মারয়াম বললো, “আমার পুত্র হবে কেমন করে যখন কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শও করেনি এবং আমি ব্যভিচারিনীও নই?”
﴿قَالَ
كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ ۖ وَلِنَجْعَلَهُ آيَةً
لِّلنَّاسِ وَرَحْمَةً مِّنَّا ۚ وَكَانَ أَمْرًا مَّقْضِيًّا﴾
২১)
ফেরেশতা বললো, “এমনটিই হবে, তোমার রব বলেন, এমনটি করা আমার জন্য অতি সহজ
আর আমি এটা এ জন্য করবো যে, এই ছেলেকে আমি লোকদের জন্য একটি নির্দশন১৫ ও নিজের পক্ষ থেকে একটি অনুগ্রহে পরিণত করবো এবং এ কাজটি হবেই”৷
﴿فَحَمَلَتْهُ فَانتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا﴾
২২) মারয়াম এ সন্তানকে গর্ভে ধারণ করলো এবং এ গর্ভসহ একটি দূরবর্তী স্থানে চলে গেলো৷১৬
﴿فَأَجَاءَهَا الْمَخَاضُ إِلَىٰ جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَٰذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنسِيًّا﴾
২৩)
তারপর প্রসববেদনা তাকে একটি খেজুর গাছের তলে পৌছে দিল৷ সে বলতে থাকলো,
“হায়! যদি আমি এর আগেই মরে যেতাম এবং আমার নাম-নিশানাই না থাকতো”৷১৭
﴿فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا﴾
২৪) ফেরেশতা পায়ের দিক থেকে তাকে ডেকে বললো, “দুঃখ করো না, তোমার রব তোমার নীচে একটি নহর প্রবাহিত করেছেন
﴿وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا﴾
২৫) এবং তুমি এ গাছের কাণ্ডটি একটু নাড়া দাও, তোমার ওপর তরতাজা খেজুর ঝরে পড়বে৷
﴿فَكُلِي
وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا ۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا
فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَٰنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ
الْيَوْمَ إِنسِيًّا﴾
২৬) তারপর তুমি খাও, পান করো এবং নিজের চোখ
জুড়াও৷ তারপর যদি তুমি মানুষের দেখা পাও তাহলে তাকে বলে দাও, আমি করুণাময়ের
জন্য রোযার মানত মেনেছি, তাই আজ আমি কারোর সাথে কথা বলবো না”৷১৮
﴿فَأَتَتْ بِهِ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُ ۖ قَالُوا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا﴾
২৭) তারপর সে এই শিশুটি নিয়ে নিজের সম্প্রদায়ের মধ্যে এলো৷ লোকেরা বলতে লাগলো, “হে মারয়াম! তুমি তো মহা পাপ করে ফেলেছো৷
﴿يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا﴾
২৮) হে হারুণের বোন!১৯ না তোমার বাপ কোন খারাপ লোক ছিল, না তোমার মা ছিল কোন ব্যভিচারিনী”৷১৯(ক)
﴿فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ ۖ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا﴾
২৯) মারয়াম শিশুর প্রতি ইশারা করলো৷ লোকেরা বললো, “কোলের শিশুর সাথে আমরা কি কথা বলবো?২০
﴿قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا﴾
৩০) শিশু বলে উঠলো, “আমি আল্লাহর বান্দা, তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী করেছেন
﴿وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا﴾
৩১) এবং রবকতময় করেছেন যেখানেই আমি থাকি না কেন আর যতদিন আমি বেঁচে থাকবো ততদিন নামায ও যাকাত আদায়ের হুকুম দিয়েছেন৷
﴿وَبَرًّا بِوَالِدَتِي وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا شَقِيًّا﴾
৩২) আর নিজের মায়ের হক আদায়কারী করেছেন,২০(ক) এবং আমাকে অহংকারী ও হতভাগা করেননি৷
﴿وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا﴾
৩৩) শান্তি আমার প্রতি যখন আমি জন্ম নিয়েছি ও যখন আমি মরবো এবং যখন আমাকে জীবিত করে উঠানো হবে”৷২১
﴿ذَٰلِكَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ ۚ قَوْلَ الْحَقِّ الَّذِي فِيهِ يَمْتَرُونَ﴾
৩৪) এ হচ্ছে মারয়ামের পুত্র ঈসা এবং এ হচ্ছে তার সম্পর্কে সত্য কথা, যে ব্যাপারে লোকেরা সন্দেহ করছে৷
﴿مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٍ ۖ سُبْحَانَهُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ﴾
৩৫)
কাউকে সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়৷ তিনি পবিত্র সত্তা৷ তিনি যখন কোন
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন, হয়ে যাও, অমনি তা হয়ে যায়৷২২
﴿وَإِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
৩৬) আর (ঈসা বলেছিল)আল্লাহ আমার রব এবং তোমাদেরও রব৷ কাজেই তোমরা তার বন্দেগী করো৷ এটিই সোজা পথ৷২৩
﴿فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ كَفَرُوا مِن مَّشْهَدِ يَوْمٍ عَظِيمٍ﴾
৩৭) কিন্তু তারপর বিভিন্ন দল২৪ পরস্পর মতবিরোধ করতে থাকলো৷ যারা কুফরী করলো তাদের জন্য সে সময়টি হবে বড়ই ধ্বংসকর যখন তারা একটি মহাবিদস দেখবে৷
﴿أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا ۖ لَٰكِنِ الظَّالِمُونَ الْيَوْمَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৩৮)
যখন তারা আমার সামনে হাযির হবে সেদিন তাদের কানও খুব স্পষ্ট শুনবে এবং
তাদের চোখও খুন স্পষ্ট দেখবে কিন্তু আজ এই জালেমরা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে
লিপ্ত৷
﴿وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
৩৯)
হে মুহাম্মাদ!যখন এরা গাফেল রয়েছে এবং ঈমান আনছে না তখন এ অবস্থায় এদেরকে
সেই দিনের ভয় দেখাও যেদিন ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং পরিতাপ করা ছাড়া আর
কোন গতি থাকবে না৷
﴿إِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْأَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَإِلَيْنَا يُرْجَعُونَ﴾
৪০) শেষ পর্যন্ত আমিই হবো পৃথিবী ও তার সমস্ত জিনিসের উত্তরাধিকারী এবং সব কিছু আমারই দিকে ফিরিয়ে দেয়া হবে৷২৫
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا﴾
৪১) আর এই কিতাবে ইবরাহীমের কথা বর্ণনা করো৷২৬ নিসন্দেহে সে একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ এবং একজন নবী ছিল
﴿إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا﴾
৪২)
(এদেরকে সেই সময়ের কথা একটু স্মরণ করিয়ে দাও) যখন সে নিজের বাপকে বললো,
“আব্বাজান! আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদত করেন, যা শোনেও না দেখেও না এবং
আপনার কোন কাজও করতে পারে না?
﴿يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا﴾
৪৩) আব্বাজান! আমার কাছে এমন এক জ্ঞান এসেছে যা আপনার কাছে আসেনি, আপনি আমার অনুসরণ করে চলুন, আমি আপনাকে সোজাপথ দেখিয়ে দেবো৷
﴿يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ عَصِيًّا﴾
৪৪) আব্বাজান!আপনি শয়তানের বন্দেগী করবেন না৷২৭ শয়তান তো করুণাময়ের অবাধ্য৷
﴿يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَن يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا﴾
৪৫) আব্বাজান! আমার ভয় হয় আপনি করুণাময়ের আযাবের শিকার হন কি না এবং শয়তানের সাথী হয়ে যান কি না”৷
﴿قَالَ أَرَاغِبٌ أَنتَ عَنْ آلِهَتِي يَا إِبْرَاهِيمُ ۖ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ ۖ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا﴾
৪৬)
বাপ বললো, “ইবরাহীম! তুমি কি আমার মাবুদদের থেকে বিমুখ হয়েছো?যদি তুমি
বিরত না হও তাহলে আমি পাথরের আঘাতে তোমাকে শেষ করে দেবো;ব্যস তুমি
চিরদিনের জন্য আমার থেকে আলাদা হয়ে যাও”৷
﴿قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ ۖ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي ۖ إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا﴾
৪৭) ইবরাহীম বললো, “আপনাকে সালাম৷ আমি আমার রবের কাছে আপনাকে মাফ করে দেবার জন্য দোয়া করবো৷২৭(ক) আমার রব আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান৷
﴿وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَأَدْعُو رَبِّي عَسَىٰ أَلَّا أَكُونَ بِدُعَاءِ رَبِّي شَقِيًّا﴾
৪৮)
আমি আপনাদেরকে ত্যাগ করছি এবং আপনারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ডাকেন
তাদেরকেও, আমি তো আমার রবকেই ডাকবো৷ আশা করি আমি নিজের রবকে ডেকে ব্যর্থ
হবো না”৷
﴿فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا﴾
৪৯)
অতপর যখন সে তাদের থেকে এবং তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ইবাদত করতো
তাদের থেকে আলাদা হয়ে গেলো তখন আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকুবের মতো সন্তান
দিলাম এবং প্রত্যেককে নবী করলাম৷
﴿وَوَهَبْنَا لَهُم مِّن رَّحْمَتِنَا وَجَعَلْنَا لَهُمْ لِسَانَ صِدْقٍ عَلِيًّا﴾
৫০) আর তাদেরকে নিজের অনুগ্রহ দান করলাম এবং তাদেরকে দিলাম যথার্থ নাম-যশ৷২৮
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مُوسَىٰ ۚ إِنَّهُ كَانَ مُخْلَصًا وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا﴾
৫১) আর এ কিতাবে মূসার কথা স্মরণ করো৷ সে ছিল এক বাছাই করা ব্যক্তি২৯ এবং ছিল রসূল নবী৷৩০
﴿وَنَادَيْنَاهُ مِن جَانِبِ الطُّورِ الْأَيْمَنِ وَقَرَّبْنَاهُ نَجِيًّا﴾
৫২) আমি তাকে তূরের ডান দিক থেকে ডাকলাম৩১ এবং গোপন আলাপের মাধ্যমে তাকে নৈকট্য দান করলাম৷৩২
﴿وَوَهَبْنَا لَهُ مِن رَّحْمَتِنَا أَخَاهُ هَارُونَ نَبِيًّا﴾
৫৩) আর নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুণকে নবী বানিয়ে তাকে সাহায্যকারী হিসেবে দিলাম৷
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا﴾
৫৪) আর এ কিতাবে ইসমাঈলের কথা স্মরণ করো৷ সে ছিল ওয়াদা পালনে সত্যনিষ্ঠ এবং ছিল রসূল নবী৷
﴿وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا﴾
৫৫) সে নিজের পরিবারবর্গকে নামায ও যাকাতের হুকুম দিতো এবং নিজের রবের কাছে ছিল একজন পছন্দনীয় ব্যক্তি৷
﴿وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِدْرِيسَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا﴾
৫৬) আর এ কিতাবে ইদরিসের কথা স্মরণ করো৷৩৩ সে একজন সত্যনিষ্ঠ মানুষ এবং একজন নবী৷
﴿وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا﴾
৫৭) আর তাকে আমি উঠিয়েছিলাম উন্নত স্থানে৷৩৪
﴿أُولَٰئِكَ
الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ مِن ذُرِّيَّةِ
آدَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَاهِيمَ
وَإِسْرَائِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَا ۚ إِذَا تُتْلَىٰ
عَلَيْهِمْ آيَاتُ الرَّحْمَٰنِ خَرُّوا سُجَّدًا وَبُكِيًّا ۩﴾
৫৮)
এরা হচ্ছে, এমন সব নবী, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছিলেন আদম সন্তানদের
মধ্য থেকে এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম, তাদের
বংশধরদের থেকে, আর ইবরাহীমের বংশধরদের থেকে ও ইসরাঈলের বংশধরদের থেকে, আর
এরা ছিল তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমি সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছিলাম এবং বাছাই
করে নিয়েছিলাম৷ এদের অবস্থা এই ছিল যে, যখন করুণাময়ের আয়াত এদেরকে শুনানো
হতো তখন কান্নারত অবস্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তো৷
﴿فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ ۖ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا﴾
৫৯) তারপর এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা নামায নষ্ট করলো৩৫ এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো৷৩৬ তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে৷
﴿إِلَّا مَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ شَيْئًا﴾
৬০) তবে যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে ও সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের সমান্যতম অধিকারও ক্ষুন্ন হবে না৷
﴿جَنَّاتِ عَدْنٍ الَّتِي وَعَدَ الرَّحْمَٰنُ عِبَادَهُ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّهُ كَانَ وَعْدُهُ مَأْتِيًّا﴾
৬১) তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় নিজের বান্দাদের কাছে অদৃশ্য পন্থায় দিয়ে রেখেছেন৷৩৭ আর অবশ্যই এ প্রতিশ্রুতি পালিত হবেই৷
﴿لَّا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا إِلَّا سَلَامًا ۖ وَلَهُمْ رِزْقُهُمْ فِيهَا بُكْرَةً وَعَشِيًّا﴾
৬২) সেখানে তারা কোন বাজে কথা শুনবে না, যা কিছুই শুনবে ঠিকই শুনবে৷৩৮ আর সকাল সন্ধ্যায় তারা অনবরত নিজেদের রিযিক লাভ করতে থাকবে৷
﴿تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيًّا﴾
৬৩) এ হচ্ছে সেই জান্নাত, যার উত্তরাধিকারী করবো আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে মুত্তাকীদেরকে৷
﴿وَمَا
نَتَنَزَّلُ إِلَّا بِأَمْرِ رَبِّكَ ۖ لَهُ مَا بَيْنَ أَيْدِينَا وَمَا
خَلْفَنَا وَمَا بَيْنَ ذَٰلِكَ ۚ وَمَا كَانَ رَبُّكَ نَسِيًّا﴾
৬৪) হে মুহাম্মাদ!৩৯ আমি
আপনার রবের হুকুম ছাড়া অবতরণ করি না৷ যাকিছু আমাদের সামনে ও যাকিছু
পেছনেএবং যাকিছু এর মাঝখানে আছে তার প্রত্যেকটি জিনিসের তিনিই মালিক এবং
আপনার রব ভুলে যান না৷
﴿رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا فَاعْبُدْهُ وَاصْطَبِرْ لِعِبَادَتِهِ ۚ هَلْ تَعْلَمُ لَهُ سَمِيًّا﴾
৬৫) তিনি আসমান ও যমীনের এবং এ দূয়ের মাঝখানে আছে সবকিছুর রব৷ কাজেই আপনি তার বন্দেগী করুন এবং তার বন্দেগীর ওপর অবিচল থাকুন৷৪০ আপনার জানা মতে তাঁর সমকক্ষ কোন সত্তা আছে কি?৪১
﴿وَيَقُولُ الْإِنسَانُ أَإِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا﴾
৬৬) মানুষ বলে, সত্যিই কি যখন আমি মরে যবো তখন আবার আমাকে জীবিত করে বের করে আনা হবে?
﴿أَوَلَا يَذْكُرُ الْإِنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْئًا﴾
৬৭) মানুষের কি স্মরণ হয় না, আমি আগেই তাকে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না?
﴿فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا﴾
৬৮) তোমার রবের কসম আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে এবং তাদের সাথে শয়তানদেরকেও ঘেরাও করে আনবো,৪২ তারপর তাদেরকে এনে জাহান্নামের চারদিকে নতজানু করে ফেলে দেবো৷
﴿ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَٰنِ عِتِيًّا﴾
৬৯) তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে ব্যক্তি করুণাময়ের বেশী অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল তাকে ছেঁটে বের করে আনবো৷৪৩
﴿ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَىٰ بِهَا صِلِيًّا﴾
৭০) তারপর আমি জানি তাদের মধ্য থেকে কারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার বেশী হকদার৷
﴿وَإِن مِّنكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا﴾
৭১) তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে জাহান্নাম অতিক্রম করবে না৷৪৪ এতো একটা স্থিরীকৃত ব্যাপার, যা সম্পন্ন করা তোমার রবের দায়িত্ব৷
﴿ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا﴾
৭২) তারপর যারা (দুনিয়ায়) মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নেবো এবং জালেমদেরকে তার মধ্য নিক্ষেপ্ত অবস্থায় রেখে দেবো৷
﴿وَإِذَا
تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا
لِلَّذِينَ آمَنُوا أَيُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَامًا وَأَحْسَنُ
نَدِيًّا﴾
৭৩) এদেরকে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াত শুনানো হয় তখন
অস্বীকারকারীরা ঈমানদারদেরকে বলে, ”বলো, আমাদের দু’দলের মধ্যে কে ভালো
অবস্থায় আছে এবং কার মজলিসগুলো বেশী জাঁকালো?”৪৫
﴿وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هُمْ أَحْسَنُ أَثَاثًا وَرِئْيًا﴾
৭৪)
অথচ এদের আগে আমি এমন কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চাইতে বেশী
সাজ-সরঞ্জামের অধিকারী ছিল এরা বাহ্যিক শান শওকতের দিক দিয়েও ছিল এদের চেয়ে
বেশী অগ্রসর৷
﴿قُلْ
مَن كَانَ فِي الضَّلَالَةِ فَلْيَمْدُدْ لَهُ الرَّحْمَٰنُ مَدًّا ۚ
حَتَّىٰ إِذَا رَأَوْا مَا يُوعَدُونَ إِمَّا الْعَذَابَ وَإِمَّا
السَّاعَةَ فَسَيَعْلَمُونَ مَنْ هُوَ شَرٌّ مَّكَانًا وَأَضْعَفُ جُندًا﴾
৭৫)
এদেরকে বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে লিপ্ত হয় করুণাময় তাকে ঢিল দিতে
থাকেন, এমনকি এ ধরনের লোকেরা যখন এমন জিনিস দেখে নেয় যার ওয়াদা তাদের সাথে
করা হয়- তা আল্লাহর আযাব হোক বা কিয়ামতের সময় তখন তারা জানতে পারে, কার
অবস্থা খারাপ এবং কার দল দুর্বল!
﴿وَيَزِيدُ اللَّهُ الَّذِينَ اهْتَدَوْا هُدًى ۗ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ مَّرَدًّا﴾
৭৬) বিপরীত পক্ষে যারা সত্য-সঠিক পথ অবলস্বন করে আল্লাহ তাদেরকে সঠিক পথে চলার ক্ষেত্রে উন্নতি দান করেন৪৬ এবং স্থায়িত্বলাভকারী সৎজাগুলোই তোমার রবের প্রতিদান ও পরিণামের দিক দিয়ে ভালো৷
﴿أَفَرَأَيْتَ الَّذِي كَفَرَ بِآيَاتِنَا وَقَالَ لَأُوتَيَنَّ مَالًا وَوَلَدًا﴾
৭৭)
তারপর তুমি কি দেখেছো সে লোককে যে আমার আয়াতসমূহ মেনে নিতে অস্বীকার করে
এবং বলে আমাকে তো ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করা হতে থাকবেই ?৪৭
﴿أَطَّلَعَ الْغَيْبَ أَمِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَٰنِ عَهْدًا﴾
৭৮) সে কি গায়েবের খবর জেনে গেছে অথবা সে রহমানের থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে রেখেছে?
﴿كَلَّا ۚ سَنَكْتُبُ مَا يَقُولُ وَنَمُدُّ لَهُ مِنَ الْعَذَابِ مَدًّا﴾
৭৯) -কখখনো নয়, সে যা কিছু বলছে তা আমি লিখে নেবো৷৪৮ এবং তার জন্য আযাবের পসরা আরো বাড়িয়ে দেবো৷
﴿وَنَرِثُهُ مَا يَقُولُ وَيَأْتِينَا فَرْدًا﴾
৮০) সে সাজসরঞ্জাম ও জনবলের কথা এ ব্যক্তি বলছে তা সব আমার কাছেই থেকে যাবে এবং সে একাকী আমার সামনে হাযির হয়ে যাবে৷
﴿وَاتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لِّيَكُونُوا لَهُمْ عِزًّا﴾
৮১) এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নিজেদের কিছু খোদা বানিয়ে রেখেছে, যাতে যারা এদের পৃষ্ঠপোষক হয়৷৪৯
﴿كَلَّا ۚ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَادَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدًّا﴾
৮২) কেউ পৃষ্ঠপোষক হবে না৷ তারা সবাই এদের ইবাদতের কথা অস্বীকার করবে৫০ এবং উল্টো এদের বিরোধী হয়ে পড়বে৷
﴿أَلَمْ تَرَ أَنَّا أَرْسَلْنَا الشَّيَاطِينَ عَلَى الْكَافِرِينَ تَؤُزُّهُمْ أَزًّا﴾
৮৩)
তুমি কি দেখো না আমি এ সত্য অস্বীকারকারীদের উপর শয়তানদের ছেড়ে রেখেছি,
যারা এদেরকে (সত্য বিরোধিতায়) খুব বেশী করে প্ররোচনা দিচ্ছে?
﴿فَلَا تَعْجَلْ عَلَيْهِمْ ۖ إِنَّمَا نَعُدُّ لَهُمْ عَدًّا﴾
৮৪) বেশ তাহলে এখন এদের উপর আযাব নাযিল করার জন্য অস্থির হয়ো না, আমি এদের দিন গণনা করেছি৷৫১
﴿يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَٰنِ وَفْدًا﴾
৮৫) সেদিনটি অচিরেই আসবে যেদিন মুত্তাকীদেরকে মেহমান হিসেবে রহমানের সামনে পেশ করবো
﴿وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا﴾
৮৬) এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত পশুর মতো জাহান্নামর দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবো৷
﴿لَّا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَٰنِ عَهْدًا﴾
৮৭) সে সময় রহমানের কাছ থেকে পরোয়ানা হাসিল করেছে তার ছাড়া আর কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না৷৫২
﴿وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَٰنُ وَلَدًا﴾
৮৮) তারা বলে, রহমান কাউকে পুত্র গ্রহণ করেছেন-
﴿لَّقَدْ جِئْتُمْ شَيْئًا إِدًّا﴾
৮৯) মারাত্মক বাজে কথা যা তোমরা তৈরী করে এনেছো৷
﴿تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا﴾
৯০) আকাশ ফেটে পড়ার, পৃথিবী বিদীর্ণ হবার এবং পাহাড় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে
﴿أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدًا﴾
৯১) এজন্য যে, লোকেরা রহমানের জন্য সন্তান থাকার দাবী করেছে!
﴿وَمَا يَنبَغِي لِلرَّحْمَٰنِ أَن يَتَّخِذَ وَلَدًا﴾
৯২) কাউকে সন্তান গ্রহণ করা রহমানের জন্য শোভন নয়৷
﴿إِن كُلُّ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ إِلَّا آتِي الرَّحْمَٰنِ عَبْدًا﴾
৯৩) পৃথিবী ও আকাশের মধ্যে যা কিছু আছে সবই তাঁর সামনে বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে৷
﴿لَّقَدْ أَحْصَاهُمْ وَعَدَّهُمْ عَدًّا﴾
৯৪) সবাইকে তিনি ঘিরে রেখেছেন এবং তিনি সবাইকে গণনা করে রেখেছেন৷
﴿وَكُلُّهُمْ آتِيهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَرْدًا﴾
৯৫) সবাই কিয়ামতের দিন একাকী অবস্থায় তাঁর সামনে আসবে৷
﴿إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَٰنُ وُدًّا﴾
৯৬) নিসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শ্রীঘ্রই রহমান তাদের জন্য অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন৷৫৩
﴿فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنذِرَ بِهِ قَوْمًا لُّدًّا﴾
৯৭)
বস্তুত হে মুহাম্মাদ! এ বাণীকে আমি সহজ করে তোমার ভাষায় এজন্য নাযিল
করেছি যাতে তুমি মুত্তাকীদেরকে সুখবর দিতে ও হঠকারীদেরকে ভয় দেখাতে পারো৷
﴿وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّن قَرْنٍ هَلْ تُحِسُّ مِنْهُم مِّنْ أَحَدٍ أَوْ تَسْمَعُ لَهُمْ رِكْزًا﴾
৯৮)
এদের পূর্বে আমি কত জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি৷ আজ কি কোথাও তাদের
নাম-নিশানা দেখতে পাও অথবা কোথাও শুনতে পাও তাদের ক্ষীণতম আওয়াজ?
আল মুমিনূন
ভূমিকা
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ﴾
১) নিশ্চিতভাবে সফলকাম হয়েছে মু’মিনরা ১
﴿الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ﴾
২) যারাঃ নিজেদের ২ নামাযে বিনয়াবনত ৩ হয়,
﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ﴾
৩) বাজে কাজ থেকে দূরে থাকে, ৪
﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ﴾
৪) যাকাতের পথে সক্রিয় থাকে, ৫
﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ﴾
৫) নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, ৬
﴿إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ﴾
৬) নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরষ্কৃত হবে না,
﴿فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ﴾
৭) তবে যারা এর বাইরে আরো কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী, ৭
﴿وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ﴾
৮) নিজেদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ৮
﴿وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ﴾
৯) এবং নিজেদের নামাযগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করে, ৯
﴿أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ﴾
১০) তারাই এমন ধরনের উত্তরাধিকারী যারা নিজেদের উত্তরাধিকার হিসেবে ফিরদাউস, ১০ লাভ করবে
﴿الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾
১১) এবং সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ ১১
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن سُلَالَةٍ مِّن طِينٍ﴾
১২) আমি মানুষকে তৈরী করেছি মাটির উপাদান থেকে,
﴿ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِي قَرَارٍ مَّكِينٍ﴾
১৩) তারপর তাকে একটি সংরক্ষিত স্থানে টপ্কে পড়া ফোঁটায় পরিবর্তত করেছি,
﴿ثُمَّ
خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً
فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ
أَنشَأْنَاهُ خَلْقًا آخَرَ ۚ فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ﴾
১৪)
এরপর সেই ফোঁটাকে জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত করেছি, তারপর সেই রক্তপিন্ডকে
মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি,এরপর মাংসপিন্ডে অস্থি-পঞ্জর স্থাপন করেছি, তারপর
অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দিয়েছি গোশত দিয়ে, ১২ তারপর তাকে দাঁড় করেছি স্বতন্ত্র একটি সৃষ্টি রূপে৷ ১৩ কাজেই আল্লাহ বড়ই বরকত সম্পন্ন, ১৪ সকল কারিগরের চাইতে উত্তম কারিগর তিনি৷
﴿ثُمَّ إِنَّكُم بَعْدَ ذَٰلِكَ لَمَيِّتُونَ﴾
১৫) এরপর তোমাদের অবশ্যই মরতে হবে,
﴿ثُمَّ إِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُونَ﴾
১৬) তারপর কিয়ামতের দিন নিশ্চিতভাবেই তোমাদের পুনরুজ্জীবিত করা হবে৷
﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا فَوْقَكُمْ سَبْعَ طَرَائِقَ وَمَا كُنَّا عَنِ الْخَلْقِ غَافِلِينَ﴾
১৭) আর তোমাদের ওপর আমি সাতটি পথ নির্মান করেছি, ১৫ সৃষ্টিকর্ম আমার মোটেই অজানা ছিল না৷ ১৬
﴿وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَسْكَنَّاهُ فِي الْأَرْضِ ۖ وَإِنَّا عَلَىٰ ذَهَابٍ بِهِ لَقَادِرُونَ﴾
১৮) আর আকাশ থেকে আমি ঠিক হিসেব মতো একটি বিশেষ পরিমাণ অনুযায়ী পানি বর্ষণ করেছি এবং তাকে ভূমিতে সংরক্ষণ করেছি৷ ১৭ আমি তাকে যেভাবে ইচ্ছা অদৃশ্য করে দিতে পারি৷ ১৮
﴿فَأَنشَأْنَا لَكُم بِهِ جَنَّاتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ لَّكُمْ فِيهَا فَوَاكِهُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ﴾
১৯)
তারপর এ পানির মাধ্যমে আমি তোমাদের জন্য খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি
করেছি৷ তোমাদের জন্যই এ বাগানগুলোয় রয়েছে প্রচুর সুস্বাদু ফল ১৯ এবং সেগুলো থেকে তোমরা জীবিকা লাভ করে থাকো৷ ২০
﴿وَشَجَرَةً تَخْرُجُ مِن طُورِ سَيْنَاءَ تَنبُتُ بِالدُّهْنِ وَصِبْغٍ لِّلْآكِلِينَ﴾
২০) আর সিনাই পাহাড়ে যে গাছ জন্মায় তাও আমি সৃষ্টি করেছি ২১ তা তেল উৎপাদন করে এবং আহারকারীদের জন্য তরকারীও৷
﴿وَإِنَّ
لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهَا
وَلَكُمْ فِيهَا مَنَافِعُ كَثِيرَةٌ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ﴾
২১) আর
প্রকৃতপক্ষে তোমাদের জন্য গবাদী পশুদের মধ্যেও একটি শিক্ষা রয়েছে৷ তাদের
পেটের মধ্যে যাকিছু আছে তা থেকে একটি জিনিস আমি তোমাদের পান করাই ২২ এবং তোমাদের জন্যে তাদের মধ্যে আরো অনেক উপকারিতাও আছে, তাদেরকে তোমরা খেয়ে থাকো
﴿وَعَلَيْهَا وَعَلَى الْفُلْكِ تُحْمَلُونَ﴾
২২) এবং তাদের ওপর ও নৌযানে আরোহণও করে থাকো৷ ২৩
﴿وَلَقَدْ
أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ
مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
২৩) আমি নূহকে পাঠালাম তার সম্প্রদায়ের কাছে৷ ২৪ সে বললো, ‘‘হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা ! আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না? ২৫
﴿فَقَالَ
الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ مَا هَٰذَا إِلَّا بَشَرٌ
مِّثْلُكُمْ يُرِيدُ أَن يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ
لَأَنزَلَ مَلَائِكَةً مَّا سَمِعْنَا بِهَٰذَا فِي آبَائِنَا
الْأَوَّلِينَ﴾
২৪) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার তার কথা মেনে নিতে
অস্বীকার করলো তারা বলতে লাগলো, ‘‘এ ব্যক্তি আর কিছুই নয় কিন্তু তোমাদেরই
মতো একজন মানুষ৷ ২৬ এর লক্ষ্য হচ্ছে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা৷ ২৭ আল্লাহ পাঠাতে চাইলে ফেরেশতা পাঠাতেন ৷ ২৭(ক) একথা তো আমরা আমাদের বাপদাদাদের আমলে কখনো শুনিনি (যে,মানুষ রসূল হয়ে আসে) ৷
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ بِهِ جِنَّةٌ فَتَرَبَّصُوا بِهِ حَتَّىٰ حِينٍ﴾
২৫) কিছুই নয়, শুধুমাত্র এ লোকটিকে একটু পাগলামিতে পেয়ে বসেছে, কিছু দিন আরো দেখে নাও (হয়তো পাগলামি ছেড়ে যাবে)”৷
﴿قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ﴾
২৬) নূহ বললো, ‘‘হে পরওয়ারদিগার ! এরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করছে এ জন্য তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’ ২৮
﴿فَأَوْحَيْنَا
إِلَيْهِ أَنِ اصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا فَإِذَا جَاءَ
أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ ۙ فَاسْلُكْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ
اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ مِنْهُمْ ۖ
وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا ۖ إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ﴾
২৭)
আমি তার কাছে অহী করলাম, ‘‘আমার তত্বাবধানে এবং আমার অহী মোতাবেক নৌকা
তৈরী করো৷ তারপর যখন আমার হুকুম এসে যাবে এবং চুলা উথলে উঠবে ২৯ তখন
তুমি সব ধরনের প্রাণীদের এক একটি জোড়া নিয়ে এতে আরোহণ করো এবং পরিবার
পরিজনদেরকেও সংগে নাও, তাদের ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে আগেই ফায়সালা হয়ে গেছে
এবং জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কিছুই বলো না, তারা এখন ডুবতে যাচ্ছে৷
﴿فَإِذَا
اسْتَوَيْتَ أَنتَ وَمَن مَّعَكَ عَلَى الْفُلْكِ فَقُلِ الْحَمْدُ
لِلَّهِ الَّذِي نَجَّانَا مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
২৮) তারপর যখন তুমি নিজের সাথীদের নিয়ে নৌকায় আরোহণ করবে তখন বলবে, আল্লাহর শোকর, যিনি আমাদের উদ্ধার করেছেন জালেমদের হাত থেকে৷ ৩০
﴿وَقُل رَّبِّ أَنزِلْنِي مُنزَلًا مُّبَارَكًا وَأَنتَ خَيْرُ الْمُنزِلِينَ﴾
২৯) আর বলো,হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে নামিয়ে দাও বরকতপূর্ণ স্থানে এবং তুমি সর্বোত্তম স্থান দানকারী৷’’ ৩১
﴿إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ وَإِن كُنَّا لَمُبْتَلِينَ﴾
৩০) এ কাহিনীতে বিরাট নিদর্শনাবলী রয়েছে, ৩২ আর পরীক্ষা তো আমি করেই থাকি৷ ৩৩
﴿ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ﴾
৩১) তাদের পরে আমি অন্য এক যুগের জাতির উত্থান ঘটালাম৷ ৩৪
﴿فَأَرْسَلْنَا فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ ۖ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
৩২)
তারপর তাদের মধ্যে স্বয়ং তাদের সম্প্রদায়ের একজন রসূল পাঠালাম (যে তাদেরকে
দাওয়াত দিল এ মর্মে যে,) আল্লাহর বন্দেগী করো, তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর
কোন মাবূদ নেই, তোমরা কি ভয় করো না?
﴿وَقَالَ
الْمَلَأُ مِن قَوْمِهِ الَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِلِقَاءِ
الْآخِرَةِ وَأَتْرَفْنَاهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا مَا هَٰذَا إِلَّا
بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يَأْكُلُ مِمَّا تَأْكُلُونَ مِنْهُ وَيَشْرَبُ مِمَّا
تَشْرَبُونَ﴾
৩৩) তার সম্প্রদায়ের যেসব সরদার ঈমান আনতে অস্বীকার
করেছিল এবং আখেরাতের সাক্ষাতকারকে মিথ্যা বলেছিল, যাদেরকে আমি দুনিয়ার
জীবনে প্রাচুর্য দান করেছিলাম, ৩৫ তারা
বলতে লাগলো , ‘‘এ ব্যক্তি তোমাদেরই মতো একজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নয়৷
তোমরা যা কিছু খাও তা-ই সে খায় এবং তোমরা যা কিছু পান করো তা-ই সে পান করে ৷
﴿وَلَئِنْ أَطَعْتُم بَشَرًا مِّثْلَكُمْ إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ﴾
৩৪) এখন যদি তোমরা নিজেদেরই মতো একজন মানু্ষের আনুগত্য করো তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ ৩৬
﴿أَيَعِدُكُمْ أَنَّكُمْ إِذَا مِتُّمْ وَكُنتُمْ تُرَابًا وَعِظَامًا أَنَّكُم مُّخْرَجُونَ﴾
৩৫)
সে কি তোমাদেরকে একথা জানায় যে, যখন তোমরা সবার পরে মাটিতে মিশে যাবে এবং
হাড়গোড়ে পরিণত হবে তখন তোমাদেরকে (কবর থেকে) বের করা হবে?
﴿هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ لِمَا تُوعَدُونَ﴾
৩৬) অসম্ভব, তোমাদের সাথে এই যে অংগীকার করা হচ্ছে এটা একেবারেই অসম্ভব৷
﴿إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ﴾
৩৭) জীবন কিছুই নয়, ব্যস এ পার্থিব জীবনটি ছাড়া, এখানেই আমরা মরি-বাঁচি এবং আমাদের কখ্খনো পুরুজ্জীবিত করা হবে না৷
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا رَجُلٌ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا وَمَا نَحْنُ لَهُ بِمُؤْمِنِينَ﴾
৩৮) এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে নিছক মিথ্যা তৈরী করছে ৩৬(ক) এবং আমরা কখনো তার কথা মেনে নিতে প্রস্তুত নই৷’’
﴿قَالَ رَبِّ انصُرْنِي بِمَا كَذَّبُونِ﴾
৩৯) রসূল বললো, ‘‘হে আমার রব! এ লোকেরা যে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো এ ব্যাপারে এখন তুমিই আমাকে সাহায্য করো৷’’
﴿قَالَ عَمَّا قَلِيلٍ لَّيُصْبِحُنَّ نَادِمِينَ﴾
৪০) জবাবে বলা হলো, ‘‘অচিরেই তারা নিজেদের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করবে৷’’
﴿فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ بِالْحَقِّ فَجَعَلْنَاهُمْ غُثَاءً ۚ فَبُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
৪১) শেষ পর্যন্ত যথাযথ সত্য অনুযায়ী একটি মহা গোলযোগ তাদেরকে ধরে ফেললো এবং আমি তাদেরকে কাদা ৩৭ বানিয়ে নিক্ষেপ করলাম-দূর হয়ে যাও জালেম জাতি!
﴿ثُمَّ أَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قُرُونًا آخَرِينَ﴾
৪২) তারপর আমি তাদের পরে অন্য জাতিদের উঠিয়েছি ৷
﴿مَا تَسْبِقُ مِنْ أُمَّةٍ أَجَلَهَا وَمَا يَسْتَأْخِرُونَ﴾
৪৩) কোন জাতি তার সময়ের পূর্বে শেষ হয়নি এবং তার পরে টিকে থাকতে পারেনি৷
﴿ثُمَّ
أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا تَتْرَىٰ ۖ كُلَّ مَا جَاءَ أُمَّةً رَّسُولُهَا
كَذَّبُوهُ ۚ فَأَتْبَعْنَا بَعْضَهُم بَعْضًا وَجَعَلْنَاهُمْ أَحَادِيثَ ۚ
فَبُعْدًا لِّقَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ﴾
৪৪) তারপর আমি একের পর এক
নিজের রসূল পাঠিয়েছি ৷ যে জাতির কাছেই তার রসূল এসেছে সে-ই তার প্রতি
মিথ্যা আরোপ করেছে,আর আমি একের পর এক জাতিকে ধ্বংস করে গেছি এমনকি তাদেরকে
স্রেফ কাহিনীই বানিয়ে ছেড়েছি, --অভিসম্পাত তাদের প্রতি যারা ঈমান আনে না ৷ ৩৮
﴿ثُمَّ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ وَأَخَاهُ هَارُونَ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ﴾
৪৫) তারপর আমি মূসা ও তার ভাই হারুনকে নিজের নিদর্শনাবলী ও সুস্পষ্ট প্রমাণ ৩৯ সহকারে ফেরাউন ও তার রাজ পারিষদদের কাছে পাঠালাম ৷
﴿إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا عَالِينَ﴾
৪৬) কিন্তু তারা অহংকার করলো এবং তারা ছিল বড়ই আস্ফালনকারী৷ ৪০
﴿فَقَالُوا أَنُؤْمِنُ لِبَشَرَيْنِ مِثْلِنَا وَقَوْمُهُمَا لَنَا عَابِدُونَ﴾
৪৭) তারা বলতে লাগলো, ‘‘আমরা কি আমাদেরই মতো দু’জন লোকের প্রতি ঈমান আনবো? ৪০(ক) আর তারা আবার এমন লোক যাদের সম্প্রদায় আমাদের দাস ৷’’ ৪১
﴿فَكَذَّبُوهُمَا فَكَانُوا مِنَ الْمُهْلَكِينَ﴾
৪৮) কাজেই তারা উভয়কে প্রত্যাখ্যান করলো এবং ধ্বংসপ্রাপ্তদের মধ্যে শামিল হলো৷ ৪২
﴿وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ﴾
৪৯) আর মুসাকে আমি কিতাব দান করেছি যাতে লোকেরা তার সাহায্যে পথের দিশা পায়৷
﴿وَجَعَلْنَا ابْنَ مَرْيَمَ وَأُمَّهُ آيَةً وَآوَيْنَاهُمَا إِلَىٰ رَبْوَةٍ ذَاتِ قَرَارٍ وَمَعِينٍ﴾
৫০) আর মারয়াম পুত্র ও তার মাকে আমি একটি নিদর্শনে পরিণত করেছিলাম ৪৩ এবং তাদেরকে রেখেছিলাম একটি সুউচ্চ ভূমিতে, সে স্থানটি ছিল নিরাপদ এবং সেখানে স্রোতম্বিনী প্রবহমান ছিল৷ ৪৪
﴿يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا ۖ إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ﴾
৫১) হে রসূল! ৪৫ পাক-পবিত্র জিনিস খাও এবং সৎকাজ করো৷ ৪৬ তোমারা যা কিছুই করো না কেন আমি তা ভালোভাবেই জানি ৷
﴿وَإِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ﴾
৫২) আর তোমাদের এ উম্মত হচ্ছে একই উম্মত এবং আমি তোমাদের রব, কাজেই আমাকেই তোমরা ভয় করো ৷ ৪৭
﴿فَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُم بَيْنَهُمْ زُبُرًا ۖ كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ﴾
৫৩)
কিন্তু পরে লোকেরা নিজেদের দীনকে পরস্পরের মধ্যে টুকরো করে নিয়েছে ৷
প্রত্যেক দলের কাছে যা কিছু আছে তার মধ্যেই নিমগ্ন হয়ে গেছে৷ ৪৮
﴿فَذَرْهُمْ فِي غَمْرَتِهِمْ حَتَّىٰ حِينٍ﴾
৫৪) ----বেশ, তাহলে ছেড়ে দাও তাদেরকে, ডুবে থাকুক নিজেদের গাফিলতির মধ্যে একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত৷ ৪৯
﴿أَيَحْسَبُونَ أَنَّمَا نُمِدُّهُم بِهِ مِن مَّالٍ وَبَنِينَ﴾
৫৫) তারা কি মনে করে, আমি যে তাদেরকে অর্থ ও সন্তান দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছি,
﴿نُسَارِعُ لَهُمْ فِي الْخَيْرَاتِ ۚ بَل لَّا يَشْعُرُونَ﴾
৫৬) তা দ্বারা আমি তাদেরকে কল্যাণ দানে তৎপর রয়েছি ? না, আসল ব্যাপার সম্পর্কে তাদের কোন চেতনাই নেই৷ ৫০
﴿إِنَّ الَّذِينَ هُم مِّنْ خَشْيَةِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ﴾
৫৭) আসলে কল্যাণের দিকে দৌড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হয়ে তা অর্জনকারী লোক ৫০(ক) তো তারাই যারা নিজেদের রবের ভয়ে ভীত, ৫১
﴿وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ﴾
৫৮) যারা নিজেদের রবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে, ৫২
﴿وَالَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ﴾
৫৯) যারা নিজেদের রবের সাথে কাউকে শরীক করে না ৫৩
﴿وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَىٰ رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ﴾
৬০) এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে,
﴿أُولَٰئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ﴾
৬১) তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে৷ ৫৪
﴿وَلَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۖ وَلَدَيْنَا كِتَابٌ يَنطِقُ بِالْحَقِّ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ﴾
৬২) আমি কোন ব্যক্তির ওপর, ৫৪(ক) তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পণ করি না ৫৫ এবং আমার কাছে একটি কিতাব আছে যা (প্রত্যেকের অবস্থা) ঠিকমতো জানিয়ে দেয় ৫৬ আর কোনক্রমেই লোকদের প্রতি জুলুম করা হবে না ৷ ৫৭
﴿بَلْ قُلُوبُهُمْ فِي غَمْرَةٍ مِّنْ هَٰذَا وَلَهُمْ أَعْمَالٌ مِّن دُونِ ذَٰلِكَ هُمْ لَهَا عَامِلُونَ﴾
৬৩) কিন্তু তারা এ ব্যাপারে অচেতন৷ ৫৮ আর তাদের কার্যাবলীও এ পদ্ধতির (যা ওপরে বর্ণনা করা হয়েছে) বিপরীত৷ তারা নিজেদের এসব কাজ করে যেতে থাকবে,
﴿حَتَّىٰ إِذَا أَخَذْنَا مُتْرَفِيهِم بِالْعَذَابِ إِذَا هُمْ يَجْأَرُونَ﴾
৬৪) অবশেষে যখন আমি তাদের বিলাসপ্রিয়দেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করবো ৫৯ তখন তারা আবার চিৎকার করতে থাকবে ৬০
﴿لَا تَجْأَرُوا الْيَوْمَ ۖ إِنَّكُم مِّنَّا لَا تُنصَرُونَ﴾
৬৫) ---এখন বন্ধ করো ৬১ তোমাদের আর্তচিৎকার আমার পক্ষ থেকে এখন কোন সাহায্য দেয়া হবে না ৷
﴿قَدْ كَانَتْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ تَنكِصُونَ﴾
৬৬) আমার আয়াত তোমাদের শোনানো হতো, তোমরা তো (রসূলের আওয়াজ শুনতেই ) পিছন ফিরে কেটে পড়তে, ৬২
﴿مُسْتَكْبِرِينَ بِهِ سَامِرًا تَهْجُرُونَ﴾
৬৭) অহংকারের সাথে তা অগ্রাহ্য করতে, নিজেদের আড্ডায় বসে তার সম্পর্কে গল্প দিতে ৬৩ ও আজেবাজে কথা বলতে ৷
﴿أَفَلَمْ يَدَّبَّرُوا الْقَوْلَ أَمْ جَاءَهُم مَّا لَمْ يَأْتِ آبَاءَهُمُ الْأَوَّلِينَ﴾
৬৮) তারা কি কখনো এ বাণী সম্পর্কে চিন্তা করেনি? ৬৪ অথবা সে এমন কথা নিয়ে এসেছে যা কখনো তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে আসেনি? ৬৫
﴿أَمْ لَمْ يَعْرِفُوا رَسُولَهُمْ فَهُمْ لَهُ مُنكِرُونَ﴾
৬৯) কিংবা তারা নিজেদের রসূলকে কখনো চিনতো না বলেই (অপরিচিত ব্যক্তি হবার কারণে) তাকে অস্বীকার করে? ৬৬
﴿أَمْ يَقُولُونَ بِهِ جِنَّةٌ ۚ بَلْ جَاءَهُم بِالْحَقِّ وَأَكْثَرُهُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ﴾
৭০) অথবা তারা কি একথা বলে যে, সে উন্মাদ? ৬৭ না, বরং সে সত্য নিয়ে এসেছে এবং সত্যই তাদের অধিকাংশের কাছে অপছন্দনীয়৷
﴿وَلَوِ
اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ
وَمَن فِيهِنَّ ۚ بَلْ أَتَيْنَاهُم بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَن ذِكْرِهِم
مُّعْرِضُونَ﴾
৭১) ----আর সত্য যদি কখনো তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করতো
তাহলে আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা ওলট পালট হয়ে
যেতো ৬৮ ---না, বরং আমি তাদের নিজেদের কথাই তাদের কাছে এনেছি এবং তারা নিজেদের কথা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে৷ ৬৯
﴿أَمْ تَسْأَلُهُمْ خَرْجًا فَخَرَاجُ رَبِّكَ خَيْرٌ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ﴾
৭২) তুমি কি তাদের কাছে কিছু চাচ্ছো ? তোমার জন্য তোমার রব যা দিয়েছেন, সেটাই ভালো এবং তিনি সবচেয়ে ভালো রিযিকদাতা ৷ ৭০
﴿وَإِنَّكَ لَتَدْعُوهُمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
৭৩) তুমি তো তাদেরকে সহজ সরল পথের দিকে ডাকছো,
﴿وَإِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ عَنِ الصِّرَاطِ لَنَاكِبُونَ﴾
৭৪) কিন্তু যারা পরকাল স্বীকার করে না তারা সঠিক পথ থেকে সরে ভিন্ন পথে চলতে চায় ৷ ৭১
﴿وَلَوْ رَحِمْنَاهُمْ وَكَشَفْنَا مَا بِهِم مِّن ضُرٍّ لَّلَجُّوا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ﴾
৭৫)
যদি আমি তাদের প্রতি করুণা করি এবং বর্তমানে তারা যে দুঃখ-কষ্টে ভুগছে তা
দূর করে দেই, তাহলে তারা নিজেদের অবাধ্যতার স্রোতে একেবারেই ভেসে যাবে৷ ৭২
﴿وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ﴾
৭৬)
তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের দুঃখ-কষ্টে ফেলে দিয়েছি, তারপরও তারা
নিজেদের রবের সামনে নত হয়নি এবং বিনয় ও দীনতাও অবলম্বন করে না ৷
﴿حَتَّىٰ إِذَا فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِيدٍ إِذَا هُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ﴾
৭৭)
তবে যখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, আমি তাদের জন্য কঠিন আযাবের
দরজা খুলে দেবো তখন অকস্মাত তোমরা দেখবে যে, এ অবস্থায় তারা সকল প্রকার
কল্যাণ থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে ৷ ৭৩
﴿وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۚ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ﴾
৭৮)
তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের শোনার ও দেখার শক্তি দিয়েছেন এবং চিন্তা করার
জন্য অন্তঃকরণ দিয়েছেন, কিন্তু তোমরা কমই কৃতজ্ঞ হয়ে থাকো ৷ ৭৪
﴿وَهُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ﴾
৭৯) তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই কাছে তোমরা একত্র হবে ৷
﴿وَهُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ وَلَهُ اخْتِلَافُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ﴾
৮০) তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন,রাতের আবর্তন তাঁরই শক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন ৷ ৭৫ একথা কি তোমাদের বোধগম্য হয় না? ৭৬
﴿بَلْ قَالُوا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُونَ﴾
৮১) কিন্তু তারা সে একই কথা বলে যা তাদের পূর্বের লোকেরা বলেছিল৷
﴿قَالُوا أَإِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَإِنَّا لَمَبْعُوثُونَ﴾
৮২) তারা বলে, ‘‘যখন আমরা মরে মাটি হয়ে যাবো এবং অস্থি পঞ্জরে পরিণত হবো তখন কি আমাদের পুনরায় জীবিত করে উঠানো হবে ?
﴿لَقَدْ وُعِدْنَا نَحْنُ وَآبَاؤُنَا هَٰذَا مِن قَبْلُ إِنْ هَٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ﴾
৮৩) আমরা এ প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি এবং আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারাও শুনে এসেছে৷ এগুলো নিছক পুরাতন কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়৷ ৭৭
﴿قُل لِّمَنِ الْأَرْضُ وَمَن فِيهَا إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
৮৪) তাদেরকে জিজ্ঞেস করোঃ যদি তোমরা জানো তাহলে বলো এ পৃথিবী এবং এর মধ্যে যারা বাস করে তারা কারা ?
﴿سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ﴾
৮৫) তারা নিশ্চয় বলবে, আল্লাহর ৷ বলো, তাহলে তোমরা সচেতন হচ্ছো না কেন ? ৭৮
﴿قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ﴾
৮৬) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, সাত আসমান ও মহান আরশের অধিপতি কে ?
﴿سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ﴾
৮৭) তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ ৷ ৭৯ বলো, তাহলে তোমরা ভয় করো না কেন ? ৮০
﴿قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
৮৮) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, বলো যদি তোমরা জেনে থাকো, কার কর্তৃত্ব ৮১ চলছে প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর? আর কে তিনি যিনি আশ্রয় দেন এবং তাঁর মোকাবিলায় কেউ আশ্রয় দিতে পারে না ?
﴿سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ فَأَنَّىٰ تُسْحَرُونَ﴾
৮৯) তারা নিশ্চয়ই বলবে, এ বিষয়টি তো আল্লাহরই জন্য নির্ধারিত ৷ বলো,তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হচ্ছো কোথায় থেকে ? ৮২
﴿بَلْ أَتَيْنَاهُم بِالْحَقِّ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ﴾
৯০) যা সত্য তা আমি তাদের সামনে এনেছি এবং এরা যে মিথ্যেবাদী এতে কোন সন্দেহ নেই ৷ ৮৩
﴿مَا
اتَّخَذَ اللَّهُ مِن وَلَدٍ وَمَا كَانَ مَعَهُ مِنْ إِلَٰهٍ ۚ إِذًا
لَّذَهَبَ كُلُّ إِلَٰهٍ بِمَا خَلَقَ وَلَعَلَا بَعْضُهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ
سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾
৯১) আল্লাহ কাউকে নিজের সন্তানে পরিণত করেননি ৮৪ এবং
তাঁর সাথে অন্য কোন ইলাহও নেই৷ যদি থাকতো তাহলে প্রত্যেক ইলাহ নিজের
সৃষ্টি নিয়ে আলাদা হয়ে যেতো ৷এবং তারপর একজন অন্যজনের ওপর চড়াও হতো৷ ৮৫ এরা যেসব কথা তৈরী করে তা থেকে আল্লাহ পাক-পবিত্র৷
﴿عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ﴾
৯২) প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু তিনি জানেন ৷ ৮৬ এরা যে শিরক নির্ধারণ করে তিনি তার ধরা ছোঁয়ার বাইরে৷
﴿قُل رَّبِّ إِمَّا تُرِيَنِّي مَا يُوعَدُونَ﴾
৯৩) হে মুহাম্মাদ (সা) ! দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! এদেরকে যে আযাবের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তুমি যদি আমার উপস্থিতিতে সে আযাব আনো
﴿رَبِّ فَلَا تَجْعَلْنِي فِي الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ﴾
৯৪) তাহলে হে পরওয়ারদিগার ! আমাকে এ জালেমদের অন্তরভুক্ত করো না ৷ ৮৭
﴿وَإِنَّا عَلَىٰ أَن نُّرِيَكَ مَا نَعِدُهُمْ لَقَادِرُونَ﴾
৯৫) আর আসল ব্যাপার হচ্ছে, তোমরা চোখের সামনে আমার সে জিনিস আনার পূর্ণ শক্তি আছে যার হুমকি আমি তাদেরকে দিচ্ছি৷
﴿ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ۚ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ﴾
৯৬) হে মুহাম্মদ (সা) ! মন্দকে দূর করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে ৷ তারা তোমার সম্পর্কে যেসব কথা বলে তা আমি খুব ভালো করেই জানি৷
﴿وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ﴾
৯৭) আর দোয়া করো, ‘‘হে আমার রব! আমি শয়তানদের উস্কানি থেকে তোমার আশ্রয় চাই৷
﴿وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ﴾
৯৮) এমনকি হে ! পরওয়ারদিগার, সে আমার কাছে আসুক এ থেকেও তো আমি তোমার আশ্রয় চাই” ৷ ৮৮
﴿حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ رَبِّ ارْجِعُونِ﴾
৯৯)
(এরা নিজেদের কৃতকর্ম থেকে বিরত হবে না) এমনকি যখন এদের কারোর মৃত্যু
উপস্থিত হবে তখন বলতে থাকবে, ‘‘হে আমার রব ! যে দুনিয়াটা আমি ছেড়ে চলে
এসেছি সেখানেই আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও, ৮৯
﴿لَعَلِّي
أَعْمَلُ صَالِحًا فِيمَا تَرَكْتُ ۚ كَلَّا ۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ
قَائِلُهَا ۖ وَمِن وَرَائِهِم بَرْزَخٌ إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾
১০০) আশা করি এখন আমি সৎকাজ করবো৷ ৯০ কখনোই নয়, ৯১ এটা তার প্রলাপ ছাড়া আর কিছু আর নয়৷ ৯২ এখন এ মৃতদের পেছনে প্রতিবন্ধক হয়ে আছে একটি অন্তরবর্তীকালীন যুগ—বরযখ যা পরবর্তী জীবনের দিন পর্যন্ত থাকবে ৷ ৯৩
﴿فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ فَلَا أَنسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَلَا يَتَسَاءَلُونَ﴾
১০১) তারপর যখনই শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তাদের মধ্যে আর কোন আত্মীয়তা বা সম্পর্কে থাকবে না এবং তারা পরস্পরকে জিজ্ঞেসও করবে না ৷ ৯৪
﴿فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ﴾
১০২) সে সময় যাদের পাল্লা ভারী হবে ৯৫ তারাই সফলকাম হবে ৷
﴿وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فِي جَهَنَّمَ خَالِدُونَ﴾
১০৩) আর যাদের পাল্লা হাল্কা হবে তারাই হবে এমনসব লোক যারা নিজেদেরকে ক্ষতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে ৷ ৯৬ তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল৷
﴿تَلْفَحُ وُجُوهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيهَا كَالِحُونَ﴾
১০৪) আগুন তাদের মুখের চামড়া জ্বালিয়ে দেবে এবং তাদের চোয়াল বাইরে বের হয়ে আসবে ৷ ৯৭
﴿أَلَمْ تَكُنْ آيَاتِي تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ﴾
১০৫) ----‘‘তোমরা কি সেসব লোক নও যাদের কাছে আমার আয়াত শুনানো হলেই বলতে এটা মিথ্যা?’’
﴿قَالُوا رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ﴾
১০৬) তারা বলবে, ‘‘হে আমাদের রব !আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের ওপর ছেয়ে গিয়েছিল,আমরা সত্যিই ছিলাম বিভ্রান্ত সম্প্রদায়৷
﴿رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ﴾
১০৭) হে পরওয়ারদিগার ! এখন আমাদের এখান থেকে বের করে দাও,আমরা যদি আবার এ ধরনের অপরাধ করি তাহলে আমরা জালেম হবো ৷
﴿قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ﴾
১০৮) আল্লাহ জবাব দেবেন,দূর হয়ে যাও আমার সামনে থেকে,পড়ে থাকো ওরি মধ্যে এবং কথা বলো না আমার সাথে৷ ৯৮
﴿إِنَّهُ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ﴾
১০৯)
তোমরা হচ্ছো তারাই ,যখন আমার কিছু বান্দা বলতো,হে আমাদের রব !আমরা ঈমান
এনেছি,আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের প্রতি করুনা করো, তুমি সকল করুণাশীলের
চাইতে বড় করুণাশীল,
﴿فَاتَّخَذْتُمُوهُمْ سِخْرِيًّا حَتَّىٰ أَنسَوْكُمْ ذِكْرِي وَكُنتُم مِّنْهُمْ تَضْحَكُونَ﴾
১১০)
তখন তোমরা তাদেরকে বিদ্রুপ করতে, এমনকি তাদের প্রতি জিদ তোমাদের আমার কথাও
ভুলিয়ে দেয় এবং তোমরা তাদেরকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করতে থাকতে ৷
﴿إِنِّي جَزَيْتُهُمُ الْيَوْمَ بِمَا صَبَرُوا أَنَّهُمْ هُمُ الْفَائِزُونَ﴾
১১১) আজ তাদের সে সবের ফল আমি এই দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম ৷ ৯৯
﴿قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ﴾
১১২) তারপর আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, বলো,পৃথিবীতে তোমরা কত বছর থাকলে?
﴿قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِّينَ﴾
১১৩) তারা বলবে, ‘‘এক দিন বা দিনেরও কিছু অংশে আমরা সেখানে অবস্থান করেছিলাম, ১০০ গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন৷’’
﴿قَالَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا ۖ لَّوْ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
১১৪) বলবেন, ‘‘অল্পক্ষণই অবস্থান করেছিলে,হায়!যদি তোমরা একথা সে সময় জানতে ৷ ১০১
﴿أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ﴾
১১৫) তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি ১০২ এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’’
﴿فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ ۖ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ﴾
১১৬) কাজেই প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ হচ্ছেন উচ্চতর ও উন্নততর, ১০৩ তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, সম্মানিত আরশের তিনিই মালিক
﴿وَمَن
يَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَٰهًا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا
حِسَابُهُ عِندَ رَبِّهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُونَ﴾
১১৭) এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য কোন মাবুদকে ডাকে, যার পক্ষে তার কাছে কোন যুক্তি প্রমাণ নেই, ১০৪ তার হিসেব রয়েছে তার রবের কাছে৷ ১০৫ এ ধরনের কাফের কখনো সফলকাম হতে পারে না ৷ ১০৬
﴿وَقُل رَّبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ﴾
১১৮) হে মুহাম্মাদ (সা) ! বলো, ‘‘হে আমার রব! ক্ষমা করো ও করুণা করো এবং তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল৷’’ ১০৭
ইয়া-সীন
ভূমিকা
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ يس﴾
১) ইয়া-সীন৷ ১
﴿وَالْقُرْآنِ الْحَكِيمِ﴾
২) বিজ্ঞানময় কুরআনের কসম,
﴿إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ﴾
৩) তুমি নিসন্দেহে রসূলদের অন্তরভুক্ত,২
﴿عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾
৪) সরল-সোজা, পথ অবলম্বনকারী
﴿تَنزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ﴾
৫) (এবং এ কুরআন) প্রবল পরাক্রমশালী ও করুণাময় সত্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত, ৩
﴿لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أُنذِرَ آبَاؤُهُمْ فَهُمْ غَافِلُونَ﴾
৬) যাতে তুমি সতর্ক করে দাও এমন এক জাতিকে যার বাপ-দাদাকে সতর্ক করা হয়নি এবং এ কারণে তারা গাফলতিতে ডুবে আছে৷ ৪
﴿لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلَىٰ أَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
৭) তাদের অধিকাংশই শাস্তি লাভের ফায়সালার হকদার হয়ে গেছে, এ জন্যই তারা ঈমান আনে না৷ ৫
﴿إِنَّا جَعَلْنَا فِي أَعْنَاقِهِمْ أَغْلَالًا فَهِيَ إِلَى الْأَذْقَانِ فَهُم مُّقْمَحُونَ﴾
৮) আমি তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে, যাতে তাদের চিবুক পর্যন্ত জড়িয়ে গেছে, তাই তারা মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷৬
﴿وَجَعَلْنَا مِن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ سَدًّا وَمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَأَغْشَيْنَاهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ﴾
৯) আমি তাদের সামনে একটি দেয়াল এবং পেছনে একটি দেয়াল দাঁড় করিয়ে দিয়েছি৷ আমি তাদেরকে ঢেকে দিয়েছি, এখন তারা কিছুই দেখতে পায় না৷ ৭
﴿وَسَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ﴾
১০) তুমি তাদেরকে সতর্ক করো বা না করো তা তাদের জন্য সমান, তারা মানবে না৷ ৮
﴿إِنَّمَا تُنذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمَٰنَ بِالْغَيْبِ ۖ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَأَجْرٍ كَرِيمٍ﴾
১১)
তুমি তো তাকেই সতর্ক করতে পারো যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময়
আল্লাহকে ভয় করে , তাকে মাগফেরাত ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতিদানের সুসংবাদ দাও৷
﴿إِنَّا نَحْنُ نُحْيِي الْمَوْتَىٰ وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوا وَآثَارَهُمْ ۚ وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُّبِينٍ﴾
১২)
আমি অবশ্যই একদিন মৃতদেরকে জীবিত করবো, যা কিছু কাজ তারা করেছে তা সবই
আমি লিখে চলছি এবং যা কিছু চিহ্ন তারা পেছনে রেখে যাচ্ছে তাও আমি স্থায়ী
করে রাখছি৷ ৯ প্রত্যেকটি জিনিস আমি একটি খোলা কিতাবে লিখে রাখছি৷
﴿وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا أَصْحَابَ الْقَرْيَةِ إِذْ جَاءَهَا الْمُرْسَلُونَ﴾
১৩) তাদেরকে দৃষ্টান্ত স্বরূপ সেই জনপদের লোকদের কাহিনী শোনাও যখন সেখানে রসূলগণ এসেছিল৷ ১০
﴿إِذْ أَرْسَلْنَا إِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوا إِنَّا إِلَيْكُم مُّرْسَلُونَ﴾
১৪)
আমি তাদের কাছে দুজন রসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তারা দুজনকেই প্রত্যাখ্যান
করেছিল; তখন আমি তৃতীয়জনকে সাহায্যার্থে পাঠিয়েছিলাম এবং তারা সবাই বলেছিল,
“তোমাদের কাছে রসূল হিসেবে আমাদের পাঠানো হয়েছে৷ ”
﴿قَالُوا مَا أَنتُمْ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَمَا أَنزَلَ الرَّحْمَٰنُ مِن شَيْءٍ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا تَكْذِبُونَ﴾
১৫) জনপদবাসীরা বললো, “তোমরা আমাদের মতো কয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউ নও ১১ এবং দয়াময় আল্লাহ মোটেই কোন জিনিস নাযিল করেননি, ১২ তোমরা স্রেফ মিথ্যা বলছো৷ ”
﴿قَالُوا رَبُّنَا يَعْلَمُ إِنَّا إِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُونَ﴾
১৬) রাসূলরা বললো, আমাদের রব জানেন আমাদের অবশ্যই তোমাদের কাছে রসূল হিসেবে পাঠানো হয়েছে
﴿وَمَا عَلَيْنَا إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ﴾
১৭) এবং সুস্পষ্টভাবে পয়গাম পৌছিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের ওপর আর কোন দায়িত্ব নেই৷ ১৩
﴿قَالُوا إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ ۖ لَئِن لَّمْ تَنتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾
১৮) জনপদবাসীরা বলতে লাগলো, “আমরা তো তোমাদেরকে নিজেদের জন্য অমঙ্গলজনক মনে করি৷ ১৪ যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে আমরা তোমাদেরকে প্রস্তারাঘাতে নিহত করবো এবং আমাদের হাতে তোমরা বড়ই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি ভোগ করবে৷
﴿قَالُوا طَائِرُكُم مَّعَكُمْ ۚ أَئِن ذُكِّرْتُم ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ﴾
১৯) রসূলরা জবাব দিল, তোমাদের অমংগল তোমাদের নিজেদের সাথেই লেগে আছে৷ ১৫ তোমাদের উপদেশ দেয়া হয়েছে বলেই কি তোমরা একথা বলছো? আসল কথা হচ্ছে, তোমরা সীমালংঘনকারী লোক৷ ১৬
﴿وَجَاءَ مِنْ أَقْصَى الْمَدِينَةِ رَجُلٌ يَسْعَىٰ قَالَ يَا قَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِينَ﴾
২০) ইতিমধ্যে নগরীর দূর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বললো, হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! রসূলদের কথা মেনে নাও৷
﴿اتَّبِعُوا مَن لَّا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُم مُّهْتَدُونَ﴾
২১) যারা তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চায় না এবং সঠিক পথের অনুসারী , তাদের কথা মেনে নাও৷ ১৭
﴿وَمَا لِيَ لَا أَعْبُدُ الَّذِي فَطَرَنِي وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
২২) কেন আমি এমন সত্তার বন্দেগী করবো না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং যাঁর দিকে তোমাদের সবাইকে ফিরে যেতে হবে?১৮
﴿أَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِ آلِهَةً إِن يُرِدْنِ الرَّحْمَٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلَا يُنقِذُونِ﴾
২৩)
তাঁকে বাদ দিয়ে কি আমি অন্য উপাস্য বানিয়ে নেবো? অথচ যদি দয়াময় আল্লাহ
আমার কোন ক্ষতি করতে চান তাহলে তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজে লাগবে না এবং
তারা আমাকে ছাড়িয়ে নিতেও পারবে না৷ ১৯
﴿إِنِّي إِذًا لَّفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
২৪) যদি এমনটি করি২০ তাহলে আমি সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে পড়বো৷
﴿إِنِّي آمَنتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُونِ﴾
২৫) আমি তো তোমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, ২১ তোমরাও আমার কথা মেনে নাও৷
﴿قِيلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ ۖ قَالَ يَا لَيْتَ قَوْمِي يَعْلَمُونَ﴾
২৬) (শেষ পর্যন্ত তারা তাকে হত্যা করে ফেললো এবং) সে ব্যক্তিকে বলে দেয়া হলো, “প্রবেশ করো জান্নাতে”৷ ২২
﴿بِمَا غَفَرَ لِي رَبِّي وَجَعَلَنِي مِنَ الْمُكْرَمِينَ﴾
২৭)
সে বললো, “হায়! যদি আমার সম্প্রদায় জানতো আমার রব কোন জিনিসের বদৌলতে
আমার মাগফিরাত করেছেন এবং আমাকে মর্যাদাশালী লোকদের অন্তরভুক্ত করেছেন৷ ”২৩
﴿وَمَا أَنزَلْنَا عَلَىٰ قَوْمِهِ مِن بَعْدِهِ مِن جُندٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَمَا كُنَّا مُنزِلِينَ﴾
২৮) এরপর তার সম্প্রদায়ের ওপর আমি আকাশ থেকে কোন সেনাদল পাঠাইনি, সেনাদল পাঠাবার কোন দরকারও আমার ছিল না৷
﴿إِن كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ خَامِدُونَ﴾
২৯) ব্যস, একটি বিস্ফোরণের শব্দ হলো এবং সাহসা তারা সব নিস্তব্ধ হয়ে গেলো৷ ২৪
﴿يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ ۚ مَا يَأْتِيهِم مِّن رَّسُولٍ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾
৩০) বান্দাদের অবস্থার প্রতি আফসোস, যে রসূলই তাদের কাছে এসেছে তাকেই তারা বিদ্রুপ করতে থেকেছে৷
﴿أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُم مِّنَ الْقُرُونِ أَنَّهُمْ إِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُونَ﴾
৩১) তারা কি দেখেনি তাদের পূর্বে কত মানব সম্প্রদায়কে আমি ধ্বংস করেছি এবং তারপর তারা আর কখনো তাদের কাছে ফিরে আসবে না?২৫
﴿وَإِن كُلٌّ لَّمَّا جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ﴾
৩২) তাদের সবাইকে একদিন আমার সামনে হাজির করা হবে৷
﴿وَآيَةٌ لَّهُمُ الْأَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَاهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ﴾
৩৩) এদের ২৬ জন্য নিষ্প্রাণ ভূমি একটি নিদর্শন৷ ২৭ আমি তাকে জীবন দান করেছি এবং তা থেকে শস্য উৎপন্ন করেছি, যা এরা খায়৷
﴿وَجَعَلْنَا فِيهَا جَنَّاتٍ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ وَفَجَّرْنَا فِيهَا مِنَ الْعُيُونِ﴾
৩৪) আমি তার মধ্যে খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করেছি এবং তার মধ্যে থেকে ঝরণাধারা উৎসারিত করেছি,
﴿لِيَأْكُلُوا مِن ثَمَرِهِ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ﴾
৩৫) যাতে এরা তার ফল ভক্ষণ করে৷ এসব কিছু এদের নিজেদের হাতের সৃষ্ট নয়৷ ২৮ তারপরও কি এরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না?২৯
﴿سُبْحَانَ الَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ﴾
৩৬) পাক-পবিত্র সে সত্তা ৩০
যিনি সব রকমের জোড়া সৃষ্টি করেছেন , তা ভূমিজাত উদ্ভিদের মধ্য থেকে হোক
অথবা স্বয়ং এদের নিজেদের প্রজাতির অর্থাৎ মানব জাতি মধ্য থেকে হোক কিংবা
এমন জিনিসের মধ্য থেকে হোক যাদেরকে এরা জানেও না৷ ৩১
﴿وَآيَةٌ لَّهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ﴾
৩৭) এদের জন্য রাত হচ্ছে আর একটি নিদর্শন৷ আমি তার উপর থেকে দিনকে সরিয়ে দেই তখন এদের ওপর অন্ধকার ছেয়ে যায়৷ ৩২
﴿وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ﴾
৩৮) আর সূর্য, সে তার নির্ধারিত গন্তব্যের দিকে ধেয়ে চলছে৷ ৩৩ এটি প্রবল পরাক্রমশালী জ্ঞানী সত্তার নিয়ন্ত্রিত হিসেব৷
﴿وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّىٰ عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ﴾
৩৯)
আর চাঁদ, তার জন্য আমি মনযিল নির্দিষ্ট করে দিয়েছি, সেগুলো অতিক্রম করে
সে শেষ পর্যন্ত আবার খেজুরের শুকনো ডালের মতো হয়ে যায়৷ ৩৪
﴿لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ۚ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ﴾
৪০) না সুর্যের ক্ষমতা আছে চাঁদকে ধরে ফেলে ৩৫ এবং না রাত দিনের ওপর অগ্রবর্তী হতে পারে, ৩৬ সবাই এক একটি কক্ষপথে সন্তরণ করছে৷৩৭
﴿وَآيَةٌ لَّهُمْ أَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ﴾
৪১) এদের জন্য এটিও একটি নিদর্শন যে, আমি এদের বংশধরদেরকে ভরা নৌকায় চরিয়ে দিয়েছি ৩৮
﴿وَخَلَقْنَا لَهُم مِّن مِّثْلِهِ مَا يَرْكَبُونَ﴾
৪২) এবং তারপর এদের জন্য ঠিক তেমনি আরো নৌযান সৃষ্টি করেছি যেগুলোতে এরা আরোহণ করে৷ ৩৯
﴿وَإِن نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنقَذُونَ﴾
৪৩) আমি চাইলে এদেরকে ডুবিয়ে দেই, এদের কোন ফরিয়াদ শ্রবণকারী থাকবে না এবং কোনভাবেই এদেরকে বাঁচানো যেতে পারে না৷
﴿إِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَمَتَاعًا إِلَىٰ حِينٍ﴾
৪৪) ব্যস, আমার রহমতই এদেরকে কূলে ভিড়িয়ে দেয় এবং একটি বিশেষ সময় পর্যন্ত জীবনের দ্বারা লাভবান হবার সুযোগ দিয়ে থাকে৷ ৪০
﴿وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّقُوا مَا بَيْنَ أَيْدِيكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ﴾
৪৫) এদেরকে যখন বলা হয়, তোমাদের সামনে যে পরিণাম আসছে এবং যা তোমাদের পেছনে অতিক্রান্ত হয়েছে তার হাত থেকে বাঁচো, ৪১ হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে (তখন এরা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়)৷
﴿وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ آيَةٍ مِّنْ آيَاتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ﴾
৪৬) এদের সামনে এদের রবের আয়াতসমূহের মধ্য থেকে যে আয়াতই আসে এরা সেদিকে দৃষ্টি দেয় না ৪২
﴿وَإِذَا
قِيلَ لَهُمْ أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ قَالَ الَّذِينَ
كَفَرُوا لِلَّذِينَ آمَنُوا أَنُطْعِمُ مَن لَّوْ يَشَاءُ اللَّهُ
أَطْعَمَهُ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
৪৭) এবং যখন
এদেরকে বলা হয়, আল্লাহ তোমাদের যে রিযিক দান করেছেন তার মধ্য থেকে কিছু
আল্লাহর পথে খরচ করো তখন এসব কুফরীতে লিপ্ত লোক মু’মিনদেরকে জবাব দেয়
“আমরা কি তাদেরকে খাওয়াবো, যাদেরকে আল্লাহ চাইলে নিজেই খাওয়াতেন? তোমরা
তো পরিস্কার বিভ্রান্তির শিকার হয়েছো৷ ৪৩
﴿وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَٰذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ﴾
৪৮) এরা ৪৪ বলে, “এ কিয়ামতের হুমকি কবে পুরা হবে? বলো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও?৪৫
﴿مَا يَنظُرُونَ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً تَأْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُونَ﴾
৪৯)
আসলে এরা যে জিনিসের দিকে তাকিয়ে আছে তা তো একটি বিস্ফোরণের শব্দ যা
সহসা এদেরকে ঠিক এমন অবস্থায় ধরে ফেলবে যখন এরা (নিজেদের পার্থিব
ব্যাপারে)বিবাদ করতে থাকবে
﴿فَلَا يَسْتَطِيعُونَ تَوْصِيَةً وَلَا إِلَىٰ أَهْلِهِمْ يَرْجِعُونَ﴾
৫০) এবং সে সময় এরা কোন অসিয়াতও করতে পারবে না এবং নিজেদের গৃহেও ফিরতে পারবে না৷ ৪৬
﴿وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَإِذَا هُم مِّنَ الْأَجْدَاثِ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يَنسِلُونَ﴾
৫১) -তারপর একটি শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং সাহসা তারা নিজেদের রবের সামনে হাজির হবার জন্য নিজেদের কবর থেকে বের হয়ে পড়বে৷ ৪৭
﴿قَالُوا يَا وَيْلَنَا مَن بَعَثَنَا مِن مَّرْقَدِنَا ۜ ۗ هَٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمَٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُونَ﴾
৫২) ভীত হয়ে বলবে, ”আরে কে আমাদেরকে আমাদের নিদমহল থেকে উঠিয়ে দাঁড় করালো?৪৮ -“এটা সে জিনিস যার প্রতিশ্রুতি দয়াময় আল্লাহ দিয়েছিলেন এবং রসূলদের কথা সত্য ছিল৷ ৪৯
﴿إِن كَانَتْ إِلَّا صَيْحَةً وَاحِدَةً فَإِذَا هُمْ جَمِيعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُونَ﴾
৫৩) একটি মাত্র প্রচন্ড আওয়াজ হবে এবং সবকিছু আমার সামনে হাজির করে দেয়া হবে৷
﴿فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَلَا تُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
৫৪) আজ কারো ৫০ প্রতি তিলমাত্র জুলুম করা হবে না এবং যেমন কাজ তোমরা করে এসেছ ঠিক তারই প্রতিদান তোমাদের দেয়া হবে
﴿إِنَّ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِي شُغُلٍ فَاكِهُونَ﴾
৫৫) -জান্নাতীরা আজ আনন্দে মশগুল রয়েছে৷ ৫১
﴿هُمْ وَأَزْوَاجُهُمْ فِي ظِلَالٍ عَلَى الْأَرَائِكِ مُتَّكِئُونَ﴾
৫৬) তারা ও তাদের স্ত্রীরা ঘন ছায়ায় রাজকীয় আসনে হেলান দিয়ে বসে আছে৷
﴿لَهُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَلَهُم مَّا يَدَّعُونَ﴾
৫৭) সব রকমের সুস্বাদু পানাহারের জিনিস তাদের জন্য সেখানে রয়েছে, যা কিছু তারা চাইবে তা তাদের জন্য হাজির রয়েছে৷
﴿سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ﴾
৫৮) দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদেরকে “সালাম” বলা হয়েছে
﴿وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ﴾
৫৯) -এবং হে অপরাধীরা!আজ তোমরা ছাঁটাই হয়ে আলাদা হয়ে যাও৷ ৫২
﴿أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِي آدَمَ أَن لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾
৬০) হে আদম সন্তানেরা!আমি কি তোমাদের এ মর্মে হিদায়াত করিনি যে, শয়তানের বন্দেগী করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু
﴿وَأَنِ اعْبُدُونِي ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾
৬১) এবং আমারই বন্দেগী করো, এটিই সরল-সঠিক পথ? ৫৩
﴿وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنكُمْ جِبِلًّا كَثِيرًا ۖ أَفَلَمْ تَكُونُوا تَعْقِلُونَ﴾
৬২) কিন্তু এ সত্ত্বেও সে তোমাদের মধ্য থেকে বিপুল সংখ্যককে গোমরাহ করে দিয়েছে, তোমাদের কি বুদ্ধি-জ্ঞান নেই? ৫৪
﴿هَٰذِهِ جَهَنَّمُ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ﴾
৬৩) এটা সে জাহান্নাম, যার ভয় তোমাদের দেখানো হতো৷
﴿اصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ﴾
৬৪) দুনিয়ায় যে কুফরী তোমরা করতে থেকেছো তার ফলস্বরূপ আজ এর ইন্ধন হও৷
﴿الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ﴾
৬৫) আজ আমি এদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছি, এদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং এদের পা সাক্ষ দেবে এরা দুনিয়ায় কি উপার্জন করে এসেছে৷ ৫৫
﴿وَلَوْ نَشَاءُ لَطَمَسْنَا عَلَىٰ أَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَأَنَّىٰ يُبْصِرُونَ﴾
৬৬) আমি চাইলে এদের চোখ বন্ধ করে দিতাম, তখন এরা পথের দিকে চেয়ে দেখতো, কোথা থেকে এরা পথের দেখা পাবে?
﴿وَلَوْ نَشَاءُ لَمَسَخْنَاهُمْ عَلَىٰ مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوا مُضِيًّا وَلَا يَرْجِعُونَ﴾
৬৭)
আমি চাইলে এদের নিজেদের জায়গায়ই এদেরকে এমনভাবে বিকৃত করে রেখে দিতাম যার
ফলে এরা সামনে এগিয়ে যেতে পারতো , না পেছনে ফিরে আসতে পারতো৷৫৬
﴿وَمَن نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِي الْخَلْقِ ۖ أَفَلَا يَعْقِلُونَ﴾
৬৮) যে ব্যক্তিকে আমি দীর্ঘ আয়ূ দান করি তার আকৃতিকে আমি একেবারেই বদলে দেই ৫৭ (এ অবস্থা দেখে কি )তাদের বোধোদয় হয় না?
﴿وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنبَغِي لَهُ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ وَقُرْآنٌ مُّبِينٌ﴾
৬৯) আমি এ (নবী)-কে কবিতা শিখাইনি এবং কাব্য চর্চা তার জন্য শোভনীয়ও নয়৷৫৮ এ তো একটি উপদেশ এবং পরিস্কার পঠনযোগ্য কিতাব,
﴿لِّيُنذِرَ مَن كَانَ حَيًّا وَيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِينَ﴾
৭০) যাতে সে প্রত্যেক জীবিত ব্যক্তিকে সতর্ক করে দিতে পারে ৫৯ এবং অস্বীকারকারীদের ওপর প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়৷
﴿أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِّمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَا أَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مَالِكُونَ﴾
৭১) এরা কি দেখে না, আমি নিজের হাতে তৈরী জিনিসের ৬০ মধ্য থেকে এদের জন্য সৃষ্টি করেছি গবাদি পশু এবং এখন এরা তার মালিক৷
﴿وَذَلَّلْنَاهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُونَ﴾
৭২) আমি এভাবে তাদেরকে এদের নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দিয়েছি যে, তাদের মধ্য থেকে কারো ওপর এরা সওয়ার হয়, কারো গোশত খায়
﴿وَلَهُمْ فِيهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ﴾
৭৩) এবং তাদের মধ্য এদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের উপকারীতা ও পানীয়৷ এরপর কি এরা কৃতজ্ঞ হয় না ৬১
﴿وَاتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنصَرُونَ﴾
৭৪) এ সবকিছু সত্ত্বেও এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে এবং এদেরকে সাহায্য করা হবে এ আশা করছে৷
﴿لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُندٌ مُّحْضَرُونَ﴾
৭৫) তারা এদের কোন সাহায্য করতে পারে না বরং উল্টো এরা তাদের জন্য সদা প্রস্তুত সৈন্য হয়ে বিরাজ করছে৷ ৬২
﴿فَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ ۘ إِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ﴾
৭৬) হ্যাঁ, এদের তৈরী কথা যেন তোমাকে মর্মাহত না করে এদের গোপন ও প্রকাশ্য সব কথাই আমি জানি৷৬৩
﴿أَوَلَمْ يَرَ الْإِنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ﴾
৭৭) মানুষ ৬৪ কি দেখে না, তাকে আমি সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে এবং তারপর সে দাঁড়িয়ে গেছে স্পষ্ট ঝগড়াটে হয়ে ? ৬৫
﴿وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَنَسِيَ خَلْقَهُ ۖ قَالَ مَن يُحْيِي الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيمٌ﴾
৭৮) এখন সে আমার ওপর উপমা প্রয়োগ করে ৬৬ এবং নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায় ৬৭ বলে, এ হাড়গুলো যখন পচে গলে গেছে এতে আবার প্রাণ সঞ্চার করবে কে?
﴿قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِي أَنشَأَهَا أَوَّلَ مَرَّةٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ﴾
৭৯) তাকে বলো, এদেরকে তিনি জীবিত করবেন যিনি প্রথমে এদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তিনি সৃষ্টির প্রত্যেকটি কাজ জানেন৷
﴿الَّذِي جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الْأَخْضَرِ نَارًا فَإِذَا أَنتُم مِّنْهُ تُوقِدُونَ﴾
৮০) তিনিই তোমাদের জন্য সবুজ বৃক্ষ থেকে আগুন সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তা থেকে নিজেদের চুলা জ্বালিয়ে থাকো৷ ৬৮
﴿أَوَلَيْسَ
الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِقَادِرٍ عَلَىٰ أَن يَخْلُقَ
مِثْلَهُم ۚ بَلَىٰ وَهُوَ الْخَلَّاقُ الْعَلِيمُ﴾
৮১) যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তিনি তাদের অনুরূপ সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখেন না ? কেন নয়, যখন তিনি পারদর্শী স্রষ্টা৷
﴿إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ﴾
৮২) তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন তাঁর কাজ হয় কেবল এতটুকু যে, তিনি তাকে হুকুম দেন, হয়ে যাও এবং তা হয়ে যায়৷
﴿فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾
৮৩) পবিত্র তিনি যার হাতে রয়েছে প্রত্যেকটি জিনিসের পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং তাঁরই দিকে তোমাদের ফিরে যেতে হবে৷
আল জুমআ
ভূমিকা
﴿بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ يُسَبِّحُ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الْأَرْضِ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ﴾
১) আসমানে যা আছে এবং যমীনে যা আছে তার সবই আল্লাহর তাসবীহ করছে৷ তিনি বাদশাহ, অতি পবিত্র এবং মহাপরাক্রমশালীল ও জ্ঞানময়৷ ১
﴿هُوَ
الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ
آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن
كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾
২) তিনিই মহান সত্তা যিনি উম্মীদের ২ মধ্যে
তাদেরই একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে তাঁর আয়াত শুনায়, তাদের
জীবনকে সজ্জিত ও সুন্দর করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেয়৷ ৩ অথচ ইতিপূর্বে তারা স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল৷ ৪
﴿وَآخَرِينَ مِنْهُمْ لَمَّا يَلْحَقُوا بِهِمْ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ﴾
৩) (এ রসূলের আগমন) তাদের অন্য লোকদের জন্যও যারা এখনো তাদের সাথে যোগ দেয়নি৷ ৫ আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়৷ ৬
﴿ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ﴾
৪) এটা তাঁর মেহেরবানী, তিনি যাকে চান তা দান করেন৷ আল্লাহ মহাকরুণার অধিকারী৷
﴿مَثَلُ
الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ
الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا ۚ بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ
كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ
الظَّالِمِينَ﴾
৫) যাদেরকে তাওরাতের বাহক বানানো হয়েছিল, কিন্তু তারা তা বহন করেনি ৭ তাদের উপমা সেই সব গাধা ৮ যা বই-পুস্তক বহন করে৷ এর চেয়েও নিকৃষ্ট উপমা সেই সব লোকরে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে৷ ৯ আল্লাহ এ রকম জালেমদের হিদায়াত দান করেন না৷
﴿قُلْ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ هَادُوا إِن زَعَمْتُمْ أَنَّكُمْ أَوْلِيَاءُ
لِلَّهِ مِن دُونِ النَّاسِ فَتَمَنَّوُا الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ
صَادِقِينَ﴾
৬) তুমি বল, হে ইহুদী হয়ে যাওয়া লোকগণ! ১০ তোমরা যদি ভেবে থাকো যে, অন্য সব মানুষ বাদ দিয়ে কেবল তোমরাই আল্লাহর প্রিয়পাত্র, ১১ আর তোমাদের এ ধারণার ক্ষেত্রে তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো,১২
﴿وَلَا يَتَمَنَّوْنَهُ أَبَدًا بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ۚ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ﴾
৭) তাহলে মৃত্যু চেয়ে নাও৷ কিন্তু যেসব অপকর্ম তারা করেছে ১৩ তার কারণে তারা কখনো মৃত্যু কামনা করবে না৷ আল্লাহ এসব জালেমকে খুব ভালভাবেই জানেন৷
﴿قُلْ
إِنَّ الْمَوْتَ الَّذِي تَفِرُّونَ مِنْهُ فَإِنَّهُ مُلَاقِيكُمْ ۖ
ثُمَّ تُرَدُّونَ إِلَىٰ عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم
بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
৮) তাদের বলো, যে মৃত্যু থেকে তোমরা
পালাচ্ছো তা তোমাদের কাছে আসবেই তারপর তোমাদেরকে সেই সত্তার সামনে পেশ করা
হবে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন৷ তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা
তোমরা করছিলে৷
﴿يَا
أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ
الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ
ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ﴾
৯) হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো, জুম’আর দিন ১৪ যখন নামাযের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও৷ ১৫ এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে৷
﴿فَإِذَا
قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ
اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ﴾
১০) তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ১৬ এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো৷ ১৭ আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে৷ ১৮
﴿وَإِذَا
رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا
ۚ قُلْ مَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ ۚ
وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ﴾
১১) আর যে সময় তারা ব্যবসায় ও খেল তামাশার উপকরণ দেখলো তখন তারা তোমাকে দাঁড়ান অবস্থায় রেখে ১৯ সেদিকে দৌড়ে গেল৷ তাদের বলো, আল্লাহর কাছে যা আছে তা খেল-তামাশা ও ব্যবসায়ের চেয়ে উত্তম৷ ২০ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা৷ ২১
আল কাদর
ভূমিকা
﴿بِّسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ﴾
১) আমি এ (কুরআন )নাযিল করেছি কদরের রাতে ৷১
﴿وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ﴾
২) তুমি কি জানো ,কদরের রাত কি ?
﴿لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ﴾
৩) কদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও বেশী ভালো ৷২
﴿تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ﴾
৪) ফেরেশতারা ও রূহ ৩ এই রাতে তাদের রবের অনুমতিক্রমে প্রত্যেকটি হুকুম নিয়ে নাযিল হয়৷৪
﴿سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ﴾
৫) এ রাতটি পুরোপুরি শান্তিময় ফজরের উদয় পর্যন্ত৷৫
আল জিন
ভূমিকা
﴿بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ
نَفَرٌ مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا﴾
১) হে নবী ,বল, আমার কাছে অহী পাঠানো হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ দিয়ে শুনেছে৷ ১ তারপর (ফিরে গিয়ে নিজ জাতির লোকদেরকে ) বলেছেঃ"আমরা এক বিস্ময়কর "কুরআন"শুনেছি ২
﴿يَهْدِي إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ ۖ وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَدًا﴾
২) যা সত্য ও সঠিক পথের নির্দেশনা দেয় তাই আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি এবং আমরা আর কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করবো না৷" ৩
﴿وَأَنَّهُ تَعَالَىٰ جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا﴾
৩) আর "আমাদের রবের মর্যাদা অতীব সমুচ্চ ৷ তিনি কাউকে স্ত্রী কিংবা সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেননি৷" ৪
﴿وَأَنَّهُ كَانَ يَقُولُ سَفِيهُنَا عَلَى اللَّهِ شَطَطًا﴾
৪) আর "আমাদের নির্বোধ লোকেরা ৫ আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ও ন্যায়ের পরিপন্থী অনেক কথাবার্তা বলে আসছে৷"
﴿وَأَنَّا ظَنَنَّا أَن لَّن تَقُولَ الْإِنسُ وَالْجِنُّ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا﴾
৫) আর "আমরা মনে করেছিলাম যে, মানুষ এবং জিন আল্লাহর সম্বন্ধে কখনো মিথ্যা বলতে পারে না৷" ৬
﴿وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا﴾
৬) আর "মানুষের মধ্য থেকে কিছু লোক জিনদের কিছু লোকের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতো৷ এভাবে তারা জিনদের অহংকার আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷"৭
﴿وَأَنَّهُمْ ظَنُّوا كَمَا ظَنَنتُمْ أَن لَّن يَبْعَثَ اللَّهُ أَحَدًا﴾
৭) আর "তোমরা যেমন ধারণা পোষণ করতে মানুষেরাও ঠিক তেমনি ধারণা পোষণ করেছিল যে, আল্লাহ কাউকে রসূল বানিয়ে পাঠাবেন না৷" ৮
﴿وَأَنَّا لَمَسْنَا السَّمَاءَ فَوَجَدْنَاهَا مُلِئَتْ حَرَسًا شَدِيدًا وَشُهُبًا﴾
৮) আর “আমরা আসমানে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছি, তা কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিন্ড দ্বারা পরিপুর্ণ ৷”
﴿وَأَنَّا كُنَّا نَقْعُدُ مِنْهَا مَقَاعِدَ لِلسَّمْعِ ۖ فَمَن يَسْتَمِعِ الْآنَ يَجِدْ لَهُ شِهَابًا رَّصَدًا﴾
৯)
আর "ইতিপূর্বে আমরা ছিঁটেফোটা কিছু আড়ি পেতে শোনার জন্য আসমানে বসার
জায়গা পেয়ে যেতাম৷ কিন্তু এখন কেউ গোপনে শোনার চেষ্টা করলে সে তার নিজের
বিরুদ্ধে নিক্ষেপের জন্য একটি উল্কা নিয়োজিত দেখতে পায়৷" ৯
﴿وَأَنَّا لَا نَدْرِي أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَن فِي الْأَرْضِ أَمْ أَرَادَ بِهِمْ رَبُّهُمْ رَشَدًا﴾
১০)
আর আমাদের বোধগম্য হচ্ছিল না যে, পৃথিবীবাসীদের সাথে কোন খারাপ আচরণ
করার সংকল্প করা হয়েছে, নাকি তাদের প্রভু, তাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে চান? ১০
﴿وَأَنَّا مِنَّا الصَّالِحُونَ وَمِنَّا دُونَ ذَٰلِكَ ۖ كُنَّا طَرَائِقَ قِدَدًا﴾
১১) আর আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক আছে নেককার আর কিছু লোক আছে তার চেয়ে নীচু পর্যায়ের৷ এভাবে আমরা বিভিন্ন মতে বিভক্ত ১১ ছিলাম৷
﴿وَأَنَّا ظَنَنَّا أَن لَّن نُّعْجِزَ اللَّهَ فِي الْأَرْضِ وَلَن نُّعْجِزَهُ هَرَبًا﴾
১২) আর আমরা মনে করতাম যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে অক্ষম করে দিতে সক্ষম নই এবং পালিয়েও তাঁকে পরাভূত করতে পারবো না৷ ১২
﴿وَأَنَّا لَمَّا سَمِعْنَا الْهُدَىٰ آمَنَّا بِهِ ۖ فَمَن يُؤْمِن بِرَبِّهِ فَلَا يَخَافُ بَخْسًا وَلَا رَهَقًا﴾
১৩)
আর আমরা যখন হিদায়াতের বানী শুনলাম তখন তার প্রতি ঈমান আনলাম ৷ যে
ব্যক্তিই তার রবের ওপর ঈমান আনবে তার অধিকার বিনষ্ট হওয়ার কিংবা অত্যাচারিত
হওয়ার ভয় থাকবে না৷ ১৩
﴿وَأَنَّا مِنَّا الْمُسْلِمُونَ وَمِنَّا الْقَاسِطُونَ ۖ فَمَنْ أَسْلَمَ فَأُولَٰئِكَ تَحَرَّوْا رَشَدًا﴾
১৪)
আর আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক লোক আছে মুসলমান (আল্লাহর আনুগত্যকারী) আর
কিছু সংখ্যক লোক আছে ন্যায় ও সত্য থেকে বিমুখ৷ তবে যারা ইসলাম (আনুগত্যের
পথ) গ্রহণ করেছে তারা মুক্তির পথ খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছে৷
﴿وَأَمَّا الْقَاسِطُونَ فَكَانُوا لِجَهَنَّمَ حَطَبًا﴾
১৫) আর যারা ন্যায় ও সত্য থেকে বিমুখ তারা হবে জাহান্নামের ইন্ধন৷ ১৪
﴿وَأَن لَّوِ اسْتَقَامُوا عَلَى الطَّرِيقَةِ لَأَسْقَيْنَاهُم مَّاءً غَدَقًا﴾
১৬) আর ১৫
(হে বনী, বলে দাও, আমাকে অহীর মাধ্যমে এও জানানো হয়েছে যে,)লোকেরা যদি
সঠিক পথের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকতো তাহলে আমি তাদের প্রচুর বৃষ্টি
বর্ষণের মধ্যে সমৃদ্ধ করতাম৷ ১৬
﴿لِّنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَمَن يُعْرِضْ عَن ذِكْرِ رَبِّهِ يَسْلُكْهُ عَذَابًا صَعَدًا﴾
১৭) যাতে এ নিয়ামতের মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করতে পারি৷ ১৭ আর যারা তাদের প্রভূর স্মরণ থেকে বিমুখ হবে ১৮ তিনি তাদের কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করবেন৷
﴿وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا﴾
১৮) আর মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য৷ তাই তোমরা আল্লাহর সাথে আর কাউকে ডেকো না ৷ ১৯
﴿وَأَنَّهُ لَمَّا قَامَ عَبْدُ اللَّهِ يَدْعُوهُ كَادُوا يَكُونُونَ عَلَيْهِ لِبَدًا﴾
১৯) আর আল্লাহর বান্দা ২০ যখন তাঁকে ডাকার জন্য দাঁড়ালো তখন তারা সবাই তার ওপর হামলা করতে উদ্যত হলো৷
﴿قُلْ إِنَّمَا أَدْعُو رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِهِ أَحَدًا﴾
২০) হে নবী, বলো "আমি শুধু আমার রবকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না৷ ২১
﴿قُلْ إِنِّي لَا أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّا وَلَا رَشَدًا﴾
২১) বলো,"আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করারও ক্ষমতা রাখি না, উপকার করারও না৷
﴿قُلْ إِنِّي لَن يُجِيرَنِي مِنَ اللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِن دُونِهِ مُلْتَحَدًا﴾
২২) বলো,আল্লাহর পাকড়াও থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে সক্ষম নয় এবং তাঁর কাছে কোন আশ্রয়ও আমি পাব না৷
﴿إِلَّا
بَلَاغًا مِّنَ اللَّهِ وَرِسَالَاتِهِ ۚ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ
وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا﴾
২৩) আল্লাহর বাণী ও হুকুম-আহকাম পৌঁছিয়ে দেয়া ছাড়া আমার কাজ আর কিছুই নয় ৷ ২২ এরপর যারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা অমান্য করবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন৷ এ ধরনের লোকেরা চিরকাল সেখানে থাকবে ৷ ২৩
﴿حَتَّىٰ إِذَا رَأَوْا مَا يُوعَدُونَ فَسَيَعْلَمُونَ مَنْ أَضْعَفُ نَاصِرًا وَأَقَلُّ عَدَدًا﴾
২৪)
(এসব লোক তাদের এ আচরণ থেকে বিরত হবে না) এমনকি অবশেষে যখন তারা সে
জিনিসটি দেখবে যার প্রতিশ্রুতি তাদের দেয়া হচ্ছে, তখন তারা জানতে পারবে যে,
কার সাহায্যকারী দুর্বল এবং কার দল সংখ্যায় কম ৷ ২৪
﴿قُلْ إِنْ أَدْرِي أَقَرِيبٌ مَّا تُوعَدُونَ أَمْ يَجْعَلُ لَهُ رَبِّي أَمَدًا﴾
২৫) বলো,আমি জানি না , যে জিনিসের প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হচ্ছে তা নিকটে , না তার জন্য আমার রব কোন দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করছেন৷ ২৫
﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا﴾
২৬) তিনি গায়েবী বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী৷ তিনি তাঁর গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না৷ ২৬
﴿إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا﴾
২৭) তবে যে রসূলকে (গায়েবী বিষয়ের কোন জ্ঞান দেয়ার জন্য) মনোনীত করেছেন ২৭ তাকে ছাড়া৷ তিনি তার সামনে ও পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করেন৷ ২৮
﴿لِّيَعْلَمَ أَن قَدْ أَبْلَغُوا رِسَالَاتِ رَبِّهِمْ وَأَحَاطَ بِمَا لَدَيْهِمْ وَأَحْصَىٰ كُلَّ شَيْءٍ عَدَدًا﴾
২৮) যাতে তিনি নিশ্চিতরূপে জানতে পারেন যে,রসূলগণ তাদের রবের বাণীসমূহ পৌঁছিয়ে দিয়েছেন ২৯ তিনি তাদের গোটা পরিবেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত৷ আর তিনি প্রতিটি জিনিস গুণে গুণে হিসেব করে রেখেছেন৷ ৩০ Mobile ০১৮৩৬৯৪৬৩৭৭
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন